টাকা ফেরত পেতে কয়েকশ পাওনাদার দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন
আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে হাজার কোটি টাকার মালিক তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা স্বপন চেয়ারম্যান
এ যেন রুপকথার কল্পকাহিনী। মাত্র ১৬ বছরের ব্যবধানে শুন্য থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক। আছে হাজার হাজার একর জমি, বিশাল লেক, প্লট ফ্ল্যাট, ঘের খামার, ঢাকায় আলীশান বাড়ি, এক সময় যার নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা ছিল, তিনি হয়ে ওঠেন রাজকীয় জীবনের অধিকারী।
আলাদিনের চেরাগ পাওয়া’ এই ব্যক্তির নাম ইফতারুল হাসান স্বপন।
তিনি ভোলা- ১ আসনের সাবেক এমপি তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা ও দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান। ছাত্র – জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর পাহাড়সমান সম্পদ ফেলে আত্মগোপনে রয়েছেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক সংসদ- সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ চাচার ওপর ভর করেই অনিয়ম -দুর্নীতির মাধ্যমে এসব সম্পদ গড়েছেন স্বপন চেয়ারম্যান। তার বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ভুয়া প্রকল্পের নামে অর্থ লোপাট, টেন্ডারবাজি, বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগ বাণিজ্য, শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য, সড়কের পাশে সরকারি গাছ বিক্রি, ইটভাটা ও রড সিমেন্ট ব্যবাসায়ীদের জিম্মি করে লাখ লাখ টাকার মালামাল বাকিতে নিয়ে টাকা ফেরৎ না দেয়া, তেতুলিয়া নদীতে জেগে ওঠা হাজার হাজার একর চর দখল, ভেকুর মাধ্যমে চরের মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি, মার্কেট দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া দলীয় নেতা কর্মীদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানী এবং মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পক্ষ বিপক্ষকে জিম্মি করে সালিশ মিমাংসা ও নারী কেলেঙ্কারিসহ অসংখ্য অভিযোগও রয়েছে।
তার এসব অপকর্মের বৈধতা দিতে তোফায়েল আহমেদকে ম্যানেজ এবং রাজনৈতিকভাবে আশ্রয় – প্রশ্রয় দিয়েছেন তোফায়েল আহমেদের মেয়ে ডাঃ তসনিমা জামান মুন্নী। তার সহযোগিতায় স্বপন চেয়ারম্যান ভোলার মধ্যে হয়ে ওঠে এক মুর্তিমান আতঙ্ক।
জানা যায়, ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন
স্বপন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠনের পর তোফায়েল আহমেদ দুটি মন্ত্রণালয়ের দ্বায়িত্ব পান। এর পর থেকেই নানা বিতর্কের মাধ্যমে উত্থান হয় ভাতিজা স্বপন এর। পাচ বছরে সীমাহীন নারী কেলেঙ্কারি ও অন্যায় অত্যাচারের মধ্যে পার করে ২০০১সালে বিএনপি সরকারেপালিয়ে যায় এই স্বপনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
১/১১ যৌথবাহিনীর শেষ সময়ে এসে আবারো প্রভাব বিস্তার শুরু করে।২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে মুর্তিমান হয়ে ওঠে স্বপন। অর্থ বিত্তের চরম প্রতিযোগিতায় নিজেকে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক বানিয়ে নেন। এর পর তার পেছনে ফিরে থাকতে হয়নি। অনিয়ম -দুর্নীতির মাধ্যমে ভাগ্য বদলে ফেলেন তিনি।
২০০১১ সালে চাচা তোফায়েল আহমেদের প্রভাবে দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন স্বপন।
দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মেসার্স মায়ের দোয়া ও সাবাব ব্রিক্স এর মালিক মোঃ আমির হোসেন খান অভিযোগ করে জানান, স্বপন চেয়ারম্যান ব্যবসায়ীকভাবে এ পর্যন্ত তার প্রায় ৮ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করেছেন। তিনি জানান,স্বপন চেয়ারম্যান তার কাছ থেকে মেসার্স সাবাব ইটভাটাটি ক্রয় করতে চেয়েছিলেন।
ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নারী শিশু নির্যাতনসহ একের পর ৬ টি মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছেন। ৩ একর ২৬ শতাংশ জমি জবর দখলে নিয়েছেন। ইট ভাটার সকল কাগজপত্র থাকার পরেও প্রভাব খাটিয়ে ২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি তার মালিকানাধীন মেসার্স সাবাব ইটভাটাটি ভেঙে সম্পুর্ন চুরমার করে দিয়েছে। অপরদিকে দুটি
ইট ভাটা থেকে লাখ লাখ টাকার ইট বাকিতে নিয়েছেন। বাংলাজারে অবস্থিত তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান ট্রেডিং কর্পোরেশন থেকে রড, সিমেন্ট ও বালিসহ সর্বমোট প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার মালামাল পর্যায়ক্রমে বাকি নিয়েছেন।
সামান্য কিছু টাকা দিয়ে আর কোন টাকা দেয়নি। পাওনা টাকা চাইতে গেলে বেঁচে আছোস এটাই তো বেশি,এই বলে হুমকি দিত। হুমকির পর কোনদিন পাওনা টাকা চাইতে সাহস করেন নি আমির হোসেন। উপরন্তু ২০১৮ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় পর পুরো পাওনা টাকা পরিশোধ করে দিয়েছে মর্মে আমির হোসেন এর কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ছেন স্বপন চেয়ারম্যান।
স্বপন চেয়ারম্যান এর রোষানলে পড়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৯ কোটি টাকা ঋন নিয়ে কোনরকম ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। তিনি এখন অনেকটাই নিঃস্ব।
স্বপন চেয়ারম্যান এর বিচার দাবী করে তার কাছে পাওনা প্রায় দুই কোটি টাকা ফেরৎ পাওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড.ইউনুস এর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আমির হোসেন খান।
চলবে……………..পর্ব (১)…….।