কোটা আন্দোলনে রাজধানীতে ভোলাৱ চরফ্যাশনের নিহত ৫ পরিবারে শোকের মাতম

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থী ও পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ভোলাৱ চরফ্যাশন উপজেলার ৫ জন নিহত হয়েছেন। এসব পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ১৭ জুলাই কিশোর মো. সিয়াম, ১৮ জুলাই যুবক হোসেন ও ১৯ জুলাই কিশোর বাহাদুর হোসেন মনির, কিশোর সোহাগ ও যুবক মো. হাছনাইন আহম্মেদসহ ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন।

সিয়াম চরফ্যাশন উপজেলার ওসমানগঞ্জ ৪নং ওয়ার্ডের জিয়ারুল হকের ছেলে, হোসেন দুলারহাট থানার নীলকমল ২নং ওয়ার্ডের মৃত জাফরের ছেলে, বাহাদুর হোসেন মনির শশীভ‚ষণ থানার রসুলপুরের জাফর মাঝির ছেলে, সোহাগ হাজারীগঞ্জের স্বপনের ছেলে ও মো. হাছনাইন আহম্মেদ দক্ষিণ আইচা থানার নজরুল নগর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের আলমগীর হোসেন মালের ছেলে।

নিহত ৫ জনকেই চরফ্যাশনের স্ব-স্ব গ্রামে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। নিহত হওয়ার খবর শুনে ৫ গ্রামে শোকের মাতম চলছে।

উপজেলার ওসমানগঞ্জ ৪নং ওয়ার্ডের নিহত সিয়ামের মা আঞ্জুরা বেগম বলেন, আমার স্বামী জিয়ারুল হক পাটওয়ারী অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে কোনোরকম জীবন পার করছিল।

ছেলে সিয়াম ৮ম শ্রেণির ছাত্র। সংসারে অভাব-অনটন দেখে সে গত রোজার ঈদের পরে কাজের জন্য ঢাকায় যায়। সিয়াম ঢাকার গুলিস্তানের ফুটপাতে একটি ব্যাটারির দোকানে কাজ করছিল। সে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে গ্রামে এসে ২৯ জুন আবার ঢাকায় চলে যায়।

১৭ জুলাই রাতে সিয়াম দোকান বন্ধ করার পর আমার সঙ্গে তার কথা হয়েছিল। যাত্রাবাড়ীর মাতুইয়ালে ভাড়া বাসায় ফেরার পথে যাত্রাবাড়ীর হানিফ ফ্লাইওভারে আন্দোলন কারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে সিয়াম গুলিবিদ্ধ হয়।

এসময় সিয়ামের খালাতো ভাই রাসেল তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। দুই ভাইয়ের মধ্যে সিয়াম ছিল বড়।

নিহত হোসেনের স্ত্রী হাসিনুর বেগম ও তার মা রিনা বেগম বলেন, সে পেশায় ট্রাকচালক ছিল। দুই কন্যা সন্তান, মা ও স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরের লাউতলা এলাকায় বসবাস করত।

১৮ জুলাই রাত ৩টার দিকে হোসেন মোহাম্মদপুর চাঁদ উদ্যান গেটে ট্রাক বন্ধ করে বাসায় যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হয়। পরদিন তাকে গ্রামের বাড়ি নীলকমল ২নং ওয়ার্ডে এনে দাফন করা হয়।

হাসনুর বেগম আরও বলেন, পরিবারে আয়-রোজগার করার মতো হোসেন ছাড়া আর কেউ নেই। বাবাকে হারিয়ে আকলিমা ও সিমা নামে তার দুই সন্তান এখন বাকরুদ্ধ।

বাহাদুর হোসেন মনিরের বাবা জাফর মাঝি বলেন, চার ভাইয়ের মধ্যে মনির সবার ছোট। সে পেশায় একজন ইলেকট্রনিক্স মিস্ত্রি ছিল।

রাজধানীর নুরসালা এলাকায় সপরিবারে বসবাস করত। মনির ১৯ জুলাই আসর নামাজের পরে গুলশান নতুন বাজার যায়। সেখানে সে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়।

সোহাগের বাবা কৃষক স্বপন বলেন, সোহাগ রাজধানীর রামপুরা বাসতলা এলাকায় বসবাস করত। সে ওই এলাকায় ফুটপাতে জামা-কাপড়ের ব্যবসা করত। ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় তার দোকানটি দেখার জন্য সে রাস্তায় বের হয়েছিল। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হয়।

মো. হাছনাইন আহম্মেদের স্ত্রী রুমা বেগম বলেন, তার স্বামী হাছনাইন পেশায় ডিশ ব্যবসায়ী। তিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার স্বামী ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় ব্যবসায়িক কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

সহকারী পুলিশ সুপার (চরফ্যাশন সার্কেল) মো. মেহেদী হাসান সাংবাদিকদেরকে বলেছেন, ঢাকায় নিহত চরফ্যাশনের ৫ পরিবারের কেউই স্ব-স্ব থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি।

 

ফেসবুকে লাইক দিন

Latest Tweets

তারিখ অনুযায়ী খবর

September 2024
F S S M T W T
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930