অনলাইন পোর্টাল নিয়ে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের ৭ সুপারিশ
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন অনলাইন পোর্টাল নীতিমালা হালনাগাদ এবং সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন বিসিএস নবম গ্রেডের সমান করার সুপারিশ করেছে। শনিবার (২২ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সংস্কার প্রস্তাব সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। গণমাধ্যমকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ করার লক্ষ্যে গঠিত এই কমিশনের সুপারিশে অনলাইন পোর্টাল নীতিমালা সংস্কার, সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা উঠে এসেছে।
অনলাইন পোর্টাল নিয়ে ৭ দফা সুপারিশ
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন অনলাইন পোর্টাল নিয়ে সাত দফা সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
১. নিবন্ধন নীতিমালা হালনাগাদ: অনলাইন পোর্টাল নিবন্ধনের নীতিমালা হালনাগাদ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ দায়িত্ব স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশনের ওপর ন্যস্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
২. নিবন্ধন পর্যালোচনা: গত দশকে যেসব অনলাইন পোর্টাল নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে, তা স্বচ্ছ নীতির অধীনে হয়নি বলে উল্লেখ করে এসব নিবন্ধন পর্যালোচনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ দায়িত্বও স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশনের ওপর ন্যস্ত করার কথা বলা হয়েছে।
৩. তদন্ত ব্যবস্থার সংস্কার: অনলাইন পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য একাধিক নিরাপত্তা সংস্থার তদন্ত ব্যবস্থা বাতিল করে শুধুমাত্র পুলিশের তদন্তব্যবস্থা রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
৪. বার্ষিক নবায়ন বাতিল: অনলাইন পোর্টালগুলোর বার্ষিক নবায়ন পদ্ধতি বাতিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
৫. আইপিটিভি ও সংবাদ বুলেটিন সম্প্রচার: অনলাইন নীতিমালায় আইপিটিভি এবং অনলাইন পোর্টালে সংবাদ বুলেটিন সম্প্রচারের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে।
৬. সরকারি বিজ্ঞাপনের স্বচ্ছতা: অনলাইন পোর্টালে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে সরকারি বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
৭. ট্রেড লাইসেন্স ফি কমানো: অনলাইন পোর্টালের জন্য ট্রেড লাইসেন্সের ফি সাধারণ ট্রেড লাইসেন্সের ফির কয়েক গুণ বেশি। এটি সংবাদমাধ্যমকে নিরুৎসাহিত করে বলে উল্লেখ করে ফি কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন বিসিএস নবম গ্রেডের সমান করার সুপারিশ করেছে। কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ জানান, সাংবাদিকদের প্রবেশপদের ন্যূনতম বেতন বিসিএস নবম গ্রেডের মতো হওয়া উচিত। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী নবম গ্রেডের কর্মকর্তাদের মূল বেতন শুরু হয় ২২ হাজার টাকা দিয়ে, যা অন্যান্য ভাতা যোগে ৩৫ হাজার টাকার বেশি হয়। ঢাকার সাংবাদিকদের জন্য জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি হওয়ায় ‘ঢাকা ভাতা’ যোগ করার প্রস্তাবও করা হয়েছে।
কমিশন সাংবাদিকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক করার সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে এক বছর শিক্ষানবিশ থাকার পর পূর্ণ সাংবাদিকের মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, “সাংবাদিকদের ন্যূনতম যোগ্যতা স্নাতক হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে এক বছর শিক্ষানবিশ থাকার পর পূর্ণ সাংবাদিকের মর্যাদা দেওয়া যেতে পারে।”
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন সাংবাদিকদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়নেরও সুপারিশ করেছে। এ বিষয়ে কমিশন একটি খসড়া অধ্যাদেশও তৈরি করেছে। কামাল আহমেদ বলেন, “সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে একটি আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। আমরা এ বিষয়ে একটি খসড়া অধ্যাদেশও তৈরি করেছি।”
গত ১৮ নভেম্বর গণমাধ্যমকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ করার লক্ষ্যে সরকার ১১ সদস্যের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করে। কমিশনের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামাল আহমেদ। কমিশনের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অ্যাটকোর সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী, বাংলাদেশ টেলিভিশনের অবসরপ্রাপ্ত উপমহাপরিচালক কামরুন নেসা হাসান, দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সচিব আখতার হোসেন খান প্রমুখ।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কমিশনের সদস্যরা। কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, “আমরা আশা করি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচিত সরকার এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করবে।” গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই সংস্কার প্রস্তাবনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।