কারও অনুরোধেই ট্রেনের টিকিট রাখা যাবে না: ফাওজুল কবির খান
অনলাইনে নতুন নিয়মে ট্রেনের টিকিট বিক্রি হবে জানিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদষ্টো মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, ট্রেনের টিকিট বিক্রি নিয়ে অভিযোগ-অনিয়মের শেষ নেই।
রেলের সচিব বা কর্মকর্তাদের কাছে বহু তদবির আসে∏যেকোনো মূল্যে টিকিট দিতে হবে। আমি সাফ বলতে চাই, সচিব-কর্মকর্তা কারও অনুরোধ বা মোবাইল ফোনের নির্দেশনায় ট্রেনের টিকিট রাখা যাবে না।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর রেলভবনে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের রুট রেশনালাইজেশন এবং ই-টিকিটিং ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা’ সংক্রান্ত বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান উপদষ্টো।
ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘রেল কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এটা জনগণের সম্পত্তি। রেলের সচিব, মন্ত্রীর জরুরি কাজ আছে বলে অন্যদের নেই, এমন তো নয়।
আমরা দেশটাকে সাধারণ মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই। মেৌখিক বা টেলিফোনে টিকিট বিতরণ বন্ধ হয়ে যাবে এখন থেকে।’
রেলের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে ট্রেনের কোনো টিকিট যাতে আগাম ধরে না রাখা হয়, সেই নির্দেশনা দিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদষ্টো মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
এ ছাড়া কোনো স্টেশনের জন্য সংরক্ষিত টিকিট বিক্রি না হলে অন্য যে স্টেশনে চাহিদা আছে, সেখানে বিক্রির নির্দেশনা দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বৈঠকে রেলের টিকিট বিক্রির পদ্ধতি আরও সহজ করার বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। শিগগিরই এর সুফল পাবে সাধারণ মানুষ।
রেল উপদষ্টো বলেন, টিকিট কালোবাজারি বন্ধে কঠোর অবস্থানে রেল। পাশাপাশি মানুষ কীভাবে টিকিট সহজে পেতে পারেন, সেই বিষয়ে কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এরপর যেসব পথে চলাচলরত ট্রেনের যাত্রী চাহিদা কম, সেখান থেকে চাহিদা বেশি থাকা পথে ট্রেন বাড়ানো হবে। টিকিটের সংখ্যা বাড়াতে প্রধান বাধা ইঞ্জিন-কোচের সঙ্কট। নতুন ইঞ্জিন-কোচ কিনতে চষ্টো অব্যাহত আছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ফাওজুল কবির খান বলেন, রেলের প্রকল্পগুলো নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। অনেক প্রকল্প আগে হয়েছে, যেগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ।
সামনে রেলের প্রকল্প নিয়ে আরও বেশি সতর্ক থাকবে সরকার। ঘুরেফিরে কিছু ঠিকাদারের কাজ পাওয়ার বিষয়ে উপদষ্টো বলেন, এখন আর আগের মতো পরিবেশ নেই। যে কেউ বিড করতে পারেন।
সেই সুযোগ তৈরি করতে হবে। যে দুই-তিনজন ঘুরেফিরে কাজ পাচ্ছেন, এটা আর হবে না। সবাই কাজ পাবেন। রেল ও সড়ককে সেই সুযোগ তৈরি করতে হবে।
এদিকে বৈঠকে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফিজার আহমেদ ট্রেনের টিকিট বিক্রির ছয়টি দুর্বলতা তুলে ধরে সেগুলো সহজ করার পরামর্শ দেন।
ছয় মাসে কীভাবে ব্যবস্থার উন্নতি করা যায়, তা নিয়ে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন তিনি। তিনি দেখিয়েছেন যে, কমলাপুর থেকে টিকিট চাইলেন, সেখানে নেই; কিন্তু তেজগাঁও থেকে আছে। আবার ৭টার ট্রেনে টিকিট নেই; কিন্তু ১০টার ট্রেনে আছে। তবে সেটির কী অবস্থা, তা জানা যাচ্ছে না।
উপদষ্টো বলেন, এখন থেকে গ্রাহক যাতে সম্ভাব্য বিকল্প কী করণীয় সেই তথ্য অ্যাপ থেকে জানতে পারেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে টিকিট বিক্রির দায়িত্বে নিয়োজিত সহজ ডটকমকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি তদারকির জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটিও করে দেওয়া হয়েছে।
এর পরও কালোবাজারি কিংবা অস্বচ্ছতা দেখলে গণমাধ্যমকে এই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করার অনুরোধ করেন উপদষ্টো। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল বাকী, রেলের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রূপম আনোয়ার প্রমুখ।