হাসিনার লোকেরা পালিয়ে ভারত গেলেন কীভাবে?

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত ও শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে সেটি হচ্ছে– দলটির অন্যান্য প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সরকারের অনুগত পুলিশ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা কোথায় আছেন? যারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন কীভাবে ভারত গেলেন?

গত ১৮ই আগস্ট সেনাবাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়েছিল ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ‘জীবন সংশয়ের আশঙ্কা থাকায়’ দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে ৬২৬ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু এসব ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। ফলে বোঝা যাচ্ছে না সেনাবাহিনীর আশ্রয়ে যারা ছিলেন, তারা কি দেশ ত্যাগ করেছেন নাকি দেশের ভেতরেই আছেন।

সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কলকাতার একটি পার্কে বসে আছেন। শামীম ওসমানকে দিল্লিতে দেখা গেছে।

এছাড়া আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় আরও কিছু নেতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন কিংবা অন্যান্য দেশে চলে গেছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্নার মৃতদেহ ভারতের মেঘালয়ে খুঁজে পাওয়ার পরে ওই রাজ্যের পুলিশ এখন অনেকটাই নিশ্চিত যে তাকে খুন করা হয়েছিল।

তার সঙ্গে প্রায় তিন কোটি ভারতীয় টাকার সমপরিমাণ মার্কিন ডলার পাওয়া গিয়েছিল বলে শোনা গেলেও পরবর্তীতে ভারতীয় পুলিশ বলছে এই তথ্য সঠিক নয়।

একই সীমান্ত দিয়ে আওয়ামী লীগপন্থী সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ভারতে পালিয়ে যাবার সময় বিজিবির হাতে ধরা পড়েন। তার কাছেও বিপুল পরিমাণ অর্থ ছিল বলে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়।

এছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার নামে দলটির ফেসবুক পেইজে বিভিন্ন বিবৃতি দেয়া হচ্ছে। এসব বিবিৃতি তারা কোথা থেকে দিচ্ছেন সে ব্যাপারে জানা যায়নি। কবে অনেক ধারণা করছেন তারা বাংলাদেশের ভেতরে নেই।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কীভাবে ভারতে পালিয়ে গেলেন? গত ৩ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালকে এ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, এটা আমারও প্রশ্ন, উনি কোন দিক দিয়ে গেলেন? সেটা যদি কোন তথ্য পেতাম, অবশ্যই আমরা তাকে আটক করতাম। উনি কীভাবে কোন দিক দিয়ে গেলেন সেটা একটা প্রশ্নের বিষয়, কখন গেলেন সেটাও জানি না।

র‍্যাব এর তরফ থেকেও বলা হচ্ছে, আসাদুজ্জামান খানের ভারতে পালিয়ে যাবার বিষয়ে তাদের কোন তথ্য নেই।

বিজিবি মহাপরিচালক বলছেন, তাদের ৭২২ টি বিওপি আছে। একটা বিওপি থেকে আরেকটা বিওপির দুরত্ব রয়েছে। প্রতিটি বিওপির বিজিবি সদস্যরা গড়ে চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত টহল দিতে হয়।

এই দূরত্বের মধ্যে স্থানীয় কোন দালাল অর্থের বিনিময়ে কাউকে যদি সীমান্ত পার করে দিতে চায় তাহলে অনেক ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আওয়ামী লীগের অনেক নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফলতি বা উদাসীনতা রয়েছে কী না সে প্রশ্ন উঠছে।

গত ২ অক্টোবর র‍্যাবের মুখপাত্র এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, এখানে উদাসীনতা বা গাফিলতি আমরা বলতে চাই না। আমাদের প্রতি যে দায়িত্ব ছিল, আমাদের যে সামর্থ্য আছে তার সবটুকু দিয়ে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের কর্ম পরিধি অনুযায়ী যতটুকু করা দরকার তর সবটুকু করে যাচ্ছি।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, আওয়ামী লীগের যেসব নেতা দেশ ছেড়ে গেছেন বলে বলা হচ্ছে, সেটি ‌‘সমঝোতার মাধ্যমে’ হতে পারে।

তিনি বলেন, সমঝোতার মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে সেইফ এক্সিট দেওয়া হয়েছে। বিষয়টা আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে বলে ধারণা করা যায়।

 

ফেসবুকে লাইক দিন

Latest Tweets

তারিখ অনুযায়ী খবর

November 2024
F S S M T W T
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930