স্ত্রী কি স্বামীকে তালাক দিতে পারে?

প্রশ্ন: আমাদের এলাকায় এক নারী (স্ত্রী) তার স্বামীকে মুখে তিন তালাক বলেছে। হোক ইচ্ছায় আর হোক রাগ করে।

এখন কি তাদের তালাক বৈধ হয়েছে?? যদিও তার স্বামী তালাক মেনে নিয়ে আবার বিয়ে করেছে। এক্ষেত্রে তাদের তালাক হয়েছে কিনা??

উত্তর: তালাক শরীয়তের একটি বিধান। এর অধিকার আল্লাহতায়ালা শুধুমাত্র স্বামীকেই দিয়েছেন। স্ত্রীকে নয়। তালাক স্বামী তার স্ত্রীকে দিতে পারে।

স্বামী যদি তার স্ত্রীকে নিজের উপর তালাক গ্রহণ করার অধিকার দিয়ে থাকে, শরীয়তের ভাষায় এ অধিকার প্রদানকে বলে ‘তাফওয়ীয’।

সে ক্ষেত্রে স্বামীর দেওয়া শর্ত অনুযায়ী স্ত্রী নিজের উপর তালাক গ্রহণ করতে পারবে। স্বামীকে তালাক দিতে পারবে না।

অতএব প্রশ্নোক্ত বর্ণনা অনুযায়ী, স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দিয়েছে। এখানে তালাক সংঘটিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

পবিত্র কুরআনে কারীমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে।

সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে।

আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ। (সুরা নিসা ৪:৩৪)

কাবিননামার ১৮নং কলামের বিষয়বস্তু হলো- স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা অর্পণ। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর।

এখানে তিনটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে।  এক. স্বামী স্ত্রীকে শরীয়ত সমর্থিত নিয়মে তালাকের ক্ষমতা অর্পণ করা; দুই.  স্ত্রী তালাকের ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে শরীয়ত সমর্থিত নিয়মে তালাক গ্রহণ করা; তিন. কাজী সাহেব বর ও কনেকে অবহিত করে সুস্পষ্ট ও সুচিন্তিত শর্তগুলো উল্লেখ করে ১৮নং কলামটি পূরণ করা।

১৮নং কলাম পূরণ করার ক্ষেত্রে স্বামীর করণীয়:

প্রথমত কাবিননামা কী? তার বিষয়বস্তু কী? তালাকের ক্ষমতা কিভাবে দিতে হয়?

স্ত্রী কিভাবে তালাকে ক্ষমতা গ্রহণ করতে হয়? ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে কাজী, বর, কনে এবং অভিভাবক সকলেরই পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করা ।

বিশেষ করে কাজী সাহেব বর এবং কনে থেকে স্বাক্ষর নেওয়ার সময়  ১ নং কলাম সম্পর্কে তাদেরকে অবশ্যই অবহিত করা

(খ) সর্বোচ্চ এক তালাকে বায়েন গ্রহণের ক্ষমতা অর্পণ করা। কারন স্ত্রী এক তালাকে বায়েনের ক্ষমতা প্রাপ্ত হলে যদি তাদের মধ্যে বনিবনা না হয়, একসাথে সংসার করতে না চায় তাহলে নিজেকে তালাক দিয়ে অন্যত্র বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন।

(গ) উক্ত ক্ষমতার বাস্তবায়ন স্ত্রীর অন্তত যেকোন দু’জন অভিভাবকের অনুমতি সাপেক্ষে হওয়ার শর্ত আরোপ করা।

(ঘ) সুচিন্তিত ও সুস্পষ্ট কিছু শর্ত যুক্ত করে তালাকের ক্ষমতা দেওয়া। প্রচলিত হালকা ও গৎবাঁধা শর্ত না দেওয়া।

এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত নিয়মে শর্তগুলো লেখা যেতে পারে। ‘বিবাহের পরে আমি যদি একেবারে নিরুদ্দেশ হয়ে যাই কিংবা অতিরিক্ত নির্যাতন করি, অথবা  একেবারেই ভাত-কাপড় না দেই তখন মোসাম্মাৎ ফাতেমা প্রতি-ঘটনার তিন দিনের মধ্যে, তার নির্ভরযোগ্য দুজন অভিভাবকের অনুমতিসাপেক্ষে নিজের ওপর এক তালাকে বায়েন নিতে পারবে’।

ফেসবুকে লাইক দিন

Latest Tweets

তারিখ অনুযায়ী খবর

September 2024
F S S M T W T
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930