অবৈধভাবে বেড়িবাঁধ দখল করে ৱেখেছেন দখলবাজৱা?

বেড়িবাঁধ থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে পারছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড

রাজধানরি বেড়িবাঁধ থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে পারছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তেমন কোনো উদ্যোগও নেই।

ঢাকা শহরের সমন্বিত বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের দৈর্ঘ্য ৩৫ কিলোমিটার। তার মধ্যে বেড়িবাঁধ ২ হাজার একর জমি অবৈধ দখলে রয়েছে।

বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর বন্যা থেকে রক্ষার রাজধানীর উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে পুরাতন ঢাকার বাবুবাজার ব্রিজ পর্যন্ত নির্মিত বেড়িবাঁধের ৩২ কিলোমিটারের দু’পাশ প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছে।

দখলদাররা ওসব জমিতে আবাসন প্রকল্প, বিপণি বিতান, স্কুল-কলেজ, ডেইরি ফার্ম, গাড়ির গ্যারেজ, এমনকি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে দখলে রেখেছে।

প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অবৈধভাবে বেড়িবাঁধ দখল করে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে বাঁধ।

পাউবোর মালিকানাধীন ওই জমি উদ্ধারে কয়েক দফা চেষ্টা করা হয়। বেড়িবাঁধের জমি উদ্ধারে সহায়তা চেয়ে গত ২০১৯ সালে ঢাকা জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু পাউবো কোনো সহযোগিতা পায়নি।

ফলে উদ্ধারও হয়নি বেদখলে থাকা জমি। অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর দিয়াবাড়ি থেকে মিরপুর-গাবতলী পর্যন্ত বেড়িবাঁধে উচ্ছেদের নামে অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে মাসিক মোটা অংকের টাকা নিচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তারা।

এ কারণে বেড়িবাঁধ উদ্ধারে পাউবো আগ্রহী হচ্ছে না। পাউবো সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে বড় বন্যা হয়।

তখন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৯৫ শতাংশ পানির নিচে তলিয়ে যায়। ঢাকা মহানগরীকে বন্যার হাত থেকে রক্ষার জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নব্বই দশকের শুরুতে দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতুর পাদদেশ বাদামতলী-বাবুবাজার, সোয়ারীঘাট, রায়েরবাজার, বসিলা, মোহাম্মদপুর তিন রাস্তা, গাবতলী হয়ে টঙ্গীর আবদুল্লাহপুর ব্রিজ পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়।

কিন্তু ঢাকা শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণের পর একশ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বাঁধের উভয় পাশে অবৈধভাবে দখল করে গড়ে তোলেন ব্যক্তিগত দোকান, বাসা-বাড়ি, স্কুল-কলেজ, গরুর খামার, হাউজিং কোম্পানী, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং বড় বড় শিল্প কারখানা।

পাউবোর ১০টি অঞ্চলের অধিগ্রহণ করা মোট জমির পরিমাণ ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩৫ একর। তার মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৭৩৫ একর।

প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণে সংরক্ষিত জমির পরিমাণ ১৮ হাজার ৮৯৯ একর। সূত্র জানায়, বেড়িবাঁধ দখল করে থাকা ব্যক্তিরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ও ভূমি অফিসের কিছু অসাধু ব্যক্তির মাধ্যমে ভুয়া কাগজ তৈরি করে জায়গা দখলে নিয়ে তারা স্থাপনা তৈরি করেছে।

কোথাও কোথাও অন্যান্যের কাছে জমি বিক্রির ঘটনাও ঘটেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে তারা মামলা করে উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ নিয়ে যাচ্ছে। ফলে এসব জমিও অবমুক্ত হচ্ছে না।

এমনকি যেসব জমি নিয়ে মামলা নেই, সেসব জমি উদ্ধারেও সহায়তা মিলছে না। আর দখলদারদের অনেকেই ভূমি অফিস থেকে ভুয়া কাগজ তৈরি করে নিজেদের নামে জমির দলিলও করে ফেলেছেন। অনেকেই আদালতে মামলা করায় উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

ফলে জমি উদ্ধারে নানামুখী তৎপরতা কাজে আসছে না। এ প্রসঙ্গে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান জানান, অবৈধ দখলে থাকা জমি উদ্ধারে জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

পাউবোর জমি উদ্ধারে তৎপরতা চালাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট জেলার ডিসিদের কাছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অবৈধ স্থাপনা উদ্ধারে সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

আর পানি উন্নয়ন বোর্ড জমি উদ্ধারে দায়িত্ব পালন করবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মুহাম্মদ আমিরুল হক ভূঞা এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

ফেসবুকে লাইক দিন

Latest Tweets

তারিখ অনুযায়ী খবর

January 2025
F S S M T W T
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31