বেপরোয়া আইসিইউ বাণিজ্যে নিঃস্ব হচ্ছে রোগীর স্বজনরা

দেশে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউর রমরমা বাণিজ্য চলছে। আর বেপরোয়া আইসিইউ বাণিজ্যে নিঃস্ব হচ্ছে রোগীর স্বজনরা। এমনকি অনেককে ভিটেমাটি বিক্রি করে আইসিইউর বিল মেটাতে হচ্ছে। দেশে সাধারণ রোগীকে আইসিইউতে নিয়ে বিল তোলা, লাইফ সাপোর্টে রেখে দিনের পর দিন বিল বাড়ানোর অভিযোগ দীর্ঘদেনের। সরকারি হাসপাতালের একটি আইসিইউ শয্যার জন্য সংকটাপন্ন ৭০-৮০ জন রোগী সিরিয়ালে থাকেন। ফলে রোগীর জীবন বাঁচাতে স্বজনদের ছুটতে হয় বেসরকারি হাসপাতালে। আর রোগীর স্বজনদের আবেগ পুঁজি করে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক এ ধরনের অনৈতিক ব্যবসা করছে। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন অর্থ জরিমানা করলেও সে বিষয়ে তোয়াক্কা করছে না হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো। বরং একই কায়দায় চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অর্থ আদায়ের বাণিজ্য। কারণ হাসপাতালগুলো জরিমানা দেয় লাখ লাখ টাকা, আর উপার্জন করে কোটি কোটি টাকা। ফলে তারা জরিমানা গুনতেও দ্বিধা করছে না। স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কোনো রোগীর যখন স্বাভাবিক সিস্টেমগুলো একদমই কাজ করে না, যখন তাকে ইনস্ট্রুমেন্টাল সাপোর্ট দেওয়ার প্রয়োজন, তখনই কেবল তাকে আইসিইউতে নিতে হয়। অর্থাৎ যার নিবিড় পরিচর্যা দরকার কেবল তাকেই আইসিইউতে নিতে হবে, তার আগে নয়। কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোয় রোগী ভর্তি হলেই তাকে আইসিইউতে নেওয়া হচ্ছে এবং সেখানে দিনের পর দিন রাখা হচ্ছে। মূলত আইসিইউ থেকে অর্থ আদায় করতেই হাসপাতালগুলো এ ধরনের অনৈতিক কাজ করছে। পাঁচ তারকা হাসপাতালে আইসিইউ বেড ভাড়া এবং আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার টাকা পড়ে। আর মাঝারি মানের হাসপাতালে ২০-৩০ হাজার টাকা খরচ পড়ে। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর সঙ্গে দেশের নামিদামি হাসপাতালগুলোও আইসিইউ, সিসিইউ এবং এনআইসিইউ নিয়ে অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে পারছে না। অহেতুক রোগীদের আইসিইউতে রেখে তারা মোটা অঙ্কের টাকা চার্জ করে থাকে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই রোগীদের রাখা হয় আইসিইউতে। সূত্র জানায়, দেশে রোগীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় আইসিইউ বেড ও আনুষঙ্গিক খরচ কেমন হবে সে-সংক্রান্ত সরকারি কোনো নীতিমালা নেই। ফলে এ সেবা খাতকে রীতিমতো বাণিজ্যিক খাতে পরিণত করা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা রোগীর স্বজনদের আবেগ পুঁজি করে বেপরোয়াভাবে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের বিল আদায় করছে। আর কোনো বিকল্প না পেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সারা জীবনের জমানো সঞ্চয় ভেঙে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ভিটেমাটি বিক্রি করে প্রিয় মানুষটিকে বাঁচাতে সব উজাড় করে দিতে হচ্ছে। কিন্তু তারপরও তাদের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না প্রত্যাশিত সেবা। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, দেশের মানুষের প্রত্যাশিত সেবা নিশ্চিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। অবৈধ, মানহীন হাসপাতালের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার। কোথাও রোগী ঠকানো কিংবা ভোগান্তির অভিযোগ পেলে চলছে অভিযান। সত্যতা মিললে জরিমানা থেকে শুরু করে ক্লিনিক সিলগালা পর্যন্ত করা হচ্ছে। মানুষের প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিতে আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি।

ফেসবুকে লাইক দিন

Latest Tweets

তারিখ অনুযায়ী খবর

December 2024
F S S M T W T
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031