৭০ বছর ধরে লোহার ফুসফুসের ভেতরে বেঁচে আছেন তিনি
সাত দশকের বেশি সময় ধরে ৬০০ পাউন্ড ‘লোহার ফুসফুসের’ মাধ্যমে বেঁচে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক ব্যক্তি। গত মার্চ মাসে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ তাকে বিশ্বের দীর্ঘতম ‘আয়রন ফুসফুসের রোগী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
পল আলেকজান্ডার নামে ওই ব্যক্তি ১৯৫২ সালে ৬ বছর বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হন।
১৯৫২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দেশটিতে সবচেয়ে বড় পোলিও প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তখন দেশটিতে ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ পোলিওতে আক্রান্ত হয়েছিল। আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই ছিল শিশু। সে বছরই পল পোলিওতে আক্রান্ত হন।
পোলিওর কারণে পলের ঘাড় থেকে শরীরের নিচের অংশ অবশ হয়ে যায়। এ কারণে তিনি নিজ থেকে শ্বাস নিতে পারছিলেন না।
শ্বাস নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন পল। কিন্তু মুখের রঙ নীল হয়ে আসছিলো। হঠাৎই এক চিকিৎসক জরুরীকালীন ভিত্তিতে পলের ‘ট্রাকিয়োটমি’ অপারেশন করেছিলেন। ফুসফুসে জমে থাকা ফ্লুইড বের করে এনেছিলেন।
কিন্তু ততক্ষণে পক্ষাঘাতে অসাড় হয়ে গিয়েছিল পলের ফুসফুস। তাই ছ’বছরের পলকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল সিলিন্ডার আকৃতির প্রকাণ্ড এক মেশিনের ভেতর। যে মেশিনটি কৃত্রিম ফুসফুসের কাজ করে। তাই মেশিনটিকে বলা হত ‘আয়রন লাং’ বা লোহার ফুসফুস।
শ্বাস নিতে সহায়তার জন্য পলকে ক্যাপসুল আকৃতির একটি যন্ত্রের (আয়রন লাং) ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ক্যাপসুলটি রোগীর মাথা ছাড়া পুরো শরীর ঢেকে রাখে। যন্ত্রটি কৃত্রিম ফুসফুস হিসেবে কাজ করে।
পরবর্তী সময়ে উন্নত প্রযুক্তি এলেও পল এই লোহার ফুসফুস ছাড়তে নারাজ। তার ভাষ্য, তিনি এই যন্ত্রের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন।
আলেকজান্ডার লোহার ফুসফুসের বাইরে খুব অল্প সময়ের জন্য শ্বাস নিতে পারেন, যাকে ফ্রগ ব্রিথিং বলা হয়। এতো বাধা সত্ত্বেও পল উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়া শেষ করেছেন, কলেজে স্নাতক হয়েছেন, আইনের ডিগ্রি অর্জন করেছেন, কয়েক দশক ধরে আইন অনুশীলন করেছেন।