ভারতের মুসলিমদের অধিকার রক্ষায় নির্ভরতার একটি নাম ‘আসাদ উদ্দিন ওয়াইসি’
ইমান২৪.কম: ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারের মুদাসসির নজর। প্রতি নির্বাচনেই বিরোধী সমাজতান্ত্রিক দলকে ভোট দিয়ে আসছিলেন।
কিন্তু এবারের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে তার পরিবারের সবাই ভোট দিয়েছে ইন্ডিয়ান মজলিশ ই ইত্তেহাদ উল মুসলেমিনকে।
কারণ, এ দলটি মুসলিমদের স্বার্থ সংরক্ষণে সব সময়ই তৎপর রয়েছে। মুদাসসির নজর বলেন, ‘কিশাসেখানকার বাসিন্দারা বলছেন, গত এক দশক ধরে বিহারের ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধী দলগুলো সেখানকার চরম দারিদ্রপীড়িত অঞ্চলকে ব্যাপক অবজ্ঞা করেছে।
মুদাসসির নজর আল জাজিরাকে বলেন, ‘ভারতীয় কংগ্রেস কিংবা অন্য ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলো মুসলিমদের সাথে প্রতারণা করেছে। এমনকি তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যায়, এমন সব সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়েও কথা বলতে ইচ্ছুক নয়। তাদেরকে তাদের কাজই করতে দিন
কিন্তু অপরদিকে, ইন্ডিয়ান মজলিশ ই ইত্তেহাদ উল মুসলেমিন তারা মুসলিমদের পক্ষে সব সময় কণ্ঠ সোচ্চার করে থাকে।নগঞ্জ জেলার সিমাচলে আমাদের গ্রামটির মোটামুটি সবাই ইত্তেহাদ উল মুসলেমিনকেই ভোট দিয়েছে।’
দলটি বিহারে সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের ৫ টি আসনে জয়লাভ করে। মনে হচ্ছে, দলটি সমাজের মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
ভারতে মুসলিমদের শতকরা হার ১৪ ভাগ হলেও ভারতের রাজনীতিতে বর্তমানে মুসলিমদের প্রভাব কমে যাচ্ছে। বিহারের মন্ত্রিসভায় এবারই প্রথম কোনো মুসলিম ধর্মাবলম্বীর ঠাঁই মেলেনি।
ভারতের বিধানসভায় ৫৪৩ জন সাংসদের মধ্যে এবারে নির্বাচিত হয়েছেন মাত্র ২৭ জন মুসলিম জনপ্রতিনিধি। যেটি বিগত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
অপরদিকে, ২০১৪ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে এমন কিছু আইন পাশ করেছেন, যা মুসলিমদের প্রতি প্রচন্ড বৈষম্যমূলক। গত বছর পাশ হয় তীব্র বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন।
আর এসবই প্রমাণ দেয়, দেশটি ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের পথ থেকে বহুদূর সরে গেছে।আর এর বিদ্বেষমূলক আইন প্রণয়নের প্রতিবাদে মুসলিমদের নেতৃত্বে ভারতজুড়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্যাপক বিক্ষোভ।
মোদি সরকার কাশ্মীরের নাগরিকদের ক্ষেত্রে অনেক বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। সংকুচিত করা হয়েছে সেখানকার নাগরিকদের স্বাধীনতা।
রাজ্যটিতে দীর্ঘ ছয় মাস ধরে আরোপ করা হয় কেন্দ্রীয় অবরোধ। এ অবস্থায় বিরোধী দল ন্যাশনাল ইন্ডিয়ান কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মুসলিমদের অভিযোগ, দলটি মুসলিমদের ইস্যুতে কোনো ভূমিকাই পালন করেনি।
অথচ ঐতিহ্যগতভাবে দলটিকে ভোট দিয়ে আসছিলেন কাশ্মীরের মুসলিমরা। বিগত এক দশক ধরে ইত্তেহাদ উল মুসলেমিন দলটি কেবল দক্ষিণাঞ্চলের তেলেঙ্গানা ও হায়দ্রাবাদে সীমাবদ্ধ থাকলেও সম্প্রতিকালে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অনেক অঞ্চলেই প্রসারিত হয়েছে।
দলটির প্রধান আসাদ উদ্দিন ওয়াইসি এ পর্যন্ত চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
সংসদ থেকে শুরু করে টেলিভিশন টকশো, সব ক্ষেত্রেই জনপ্রিয় তিনি।মুসলিমদের অধিকারের প্রশ্নে সর্বত্রই সোচ্চার রয়েছেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। তিনি বরাবরই অভিযোগ করে থাকেন, ভারতের প্রধান বিরোধী দল সব সময় মুসলিমদের অধিকারের প্রশ্নে নিরব।
তার অভিযোগ, মোদির ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়েছে কংগ্রেস। ভারতীয় সংবিধানের মূলনীতি রক্ষায় কখনোই সামনের সারিতে আসেনি ভারতের প্রধান বিরোধী দল।
ভারতের বিহার রাজ্যের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে কংগ্রেস এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দল মুসলিম সম্পর্কিত ইস্যু এড়িয়ে গেছে। দল দুটি নির্বাচনী প্রচারণায় কেবল গুরুত্ব দিয়েছে কর্মসংস্থান এবং উন্নয়ন সম্পর্কিত বিষয়কে।
মাজজাদ আলম নামের বিহারের স্থানীয় এক সাংবাদিক আল জাজিরাকে বলেন, দল দুইটি সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।
এ অবস্থায় মুসলিম ভোটারদের বেশিরভাগ অংশ আসাদ উদ্দিন ওয়াইসির দলকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ, তারা মুসলিমদের পক্ষে কথা বলার জন্য এই দলটিকেই উপযুক্ত মনে করে।
ভারতীয় বিশ্লেষকদের ধারণা, স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের রাজনীতিতে ইন্ডিয়ান মজলিশ ই ইত্তেহাদ উল মুসলেমিনই সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেছে।
দলটির মূখপাত্র ওয়ারিস পাঠান আল জাজিরাকে বলেন, ‘ভারতের মুসলিমসহ সংখ্যালঘু মানুষদের অধিকার ও ন্যায়বিচার রক্ষার ইস্যুতে আমরা সব সময়ই জোরালো ভূমিকা পালন করবো।’
বিহারের সবশেষ নির্বাচনে দলটি ৫ লাখ ভোট পেয়েছে। জয়ী হয়েছে ৫ আসনে।কিন্তু ২০১৫ সালে নির্বাচনে পেয়েছিল মাত্র ৮০ হাজার ভোট।
তখনকার সময়ে একটি আসনেও জয়ী হতে পারেনি। আগেরকার ভোটের সাথে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে ভোটের তুলনা করলেই দলটির জনপ্রিয়তা সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
দলটির আরেক সিনিয়র নেতা ওয়াকার বলেন, ভারতের রাজনীতিতে কেবল মুসলিমদের ইস্যুতেই নয়, বরং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার অধিকার নিয়েই সার্বজনীন রাজনীতি করবে ইন্ডিয়ান মজলিশ।
তিনি বলেন, আমরা কখনো কেবল মুসলিমদের প্রতিনিধিত্বকারী দল হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করবো না।