জনমতের প্রতি সরকারের সম্মান
বাংলাদেশের পাসপোর্টে ফিরলো ‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’
একটি দীর্ঘ জনমত ও আন্দোলনের প্রেক্ষিতে অবশেষে বাংলাদেশ সরকারের পাসপোর্টে পুনরায় যুক্ত হলো বহুল আলোচিত ‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ (ইসরাইল ব্যতীত) শব্দযুগল। রোববার (১৩ এপ্রিল) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব নীলিমা আফরোজ জানান, “পাসপোর্টে ‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ শব্দদুটি পুনর্বহাল করা হয়েছে এবং এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন ইতোমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে।”
এর আগে, বাংলাদেশের পাসপোর্টে সুস্পষ্টভাবে লেখা থাকত—‘এই পাসপোর্ট বিশ্বের সব দেশের জন্য বৈধ, ইসরাইল ব্যতীত।’ কিন্তু ২০২০ সালে ই-পাসপোর্ট চালুর সময় এ শব্দগুচ্ছটি গোপনে বাদ দেওয়া হয়। তখন সরকার এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি, যা নিয়ে বিস্তর আলোচনা ও সমালোচনা সৃষ্টি হয়।
‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ শব্দদুটি পুনর্বহালের দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন সম্প্রতি সোচ্চার হয়ে ওঠে। জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে লাগাতার আন্দোলন শুরু করে এবং ১৮ মার্চ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করে। উপদেষ্টা জানান, দাবিটি যৌক্তিক এবং বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ ছাড়া, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় চলমান সহিংসতার প্রতিবাদে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ একযোগে সোচ্চার হয়ে ওঠে। গত ৮ এপ্রিল ঢাকায় একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, যেখানে পাসপোর্টে ‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ পুনঃস্থাপনের জোর দাবি জানানো হয়। ৯ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজও একাত্মতা প্রকাশ করে একই দাবি তোলেন।
সবশেষ, শনিবার অনুষ্ঠিত ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচির ঘোষণাপত্রেও এ দাবি নতুন করে উত্থাপন করা হয়। জনসাধারণের অনুভূতি, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক সংহতির প্রতি সম্মান জানিয়েই সরকার অবশেষে ‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেয় বলে অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের পাসপোর্টে ইসরাইলকে বাদ দেওয়া একটি নীতিগত অবস্থান—যা জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সংহতি প্রকাশের প্রতীক হিসেবেই দেখা হয়। সরকার পূর্বেও জানিয়েছে, এই অবস্থানের সঙ্গে দেশের পররাষ্ট্র নীতির একটি নৈতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে।