ব্রেকিং নিউজঃ

প্রিয় নবিজীৱ শেষ বিদায়

ফজরের আজান ভেসে এলো মসজিদ থেকে। ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ পর্যন্ত এসে থেমে গেল। বিলাল (রা.) আর সামনে এগোতে পারলেন না।

বারবার গলায় আটকে যাচ্ছে। চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে। নাহ্, তিনি আর পারছেন না। হায়! আমার আজান শোনার মানুষটি চলে গেল! ঝরঝর করে কাঁদতে লাগলেন। ‘

হাইয়া আলাস সালাহ’ ঢেকে গেল কান্নার আড়ালে। সবাই নিজের পরানখানি মাটিচাপা দিয়ে এসেছে। বুক ফাঁকা। শূন্য দৃষ্টি।

ফাতিমা (রা.) কাঁদছেন আর বলছেন, ‘আনাস! তোমার পক্ষে কী করে সম্ভব হলো, তুমি তোমার রাসূলকে মাটিচাপা দিয়ে রেখে এলে?’ আ-হ! সবার অন্তরটা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।

সবাই কাঁদছে। সারাটা মসজিদে কান্নার রোল পড়ে গেল। আলী (রা.) দাঁড়ানো। হঠাৎ মাটিতে পড়ে গেলেন।

উসমান (রা.) শিশুর মতো ছটফট করতে লাগলেন। উমর (রা.) সইতে না পেরে বলে উঠলেন, ‘যে বলবে তিনি মারা গেছেন আমি এ তলোয়ার দিয়ে তার মাথা ফেলে দেব।

এখন সবার দৃষ্টি কর্ণধার সিদ্দীকে আকবর (রা.)-এর প্রতি। তিনি বিরহকে চাপা দিয়ে বহু কষ্টে নিজেকে সংযত রাখলেন।

স্থির থাকার চেষ্টা করলেন। বহু কষ্ট নিজের মাঝে চাপা দিচ্ছেন। কিন্তু এরপরও এভাবে কি পারা যায়! নিজেকে কোনো রকম সামলিয়ে হুজরায় প্রবেশ করলেন।

কপালে চুমু খেলেন। বুকে চেপে ধরে কান্না শুরু করলেন আর বললেন, ‘আপনি জীবনে মরণে পবিত্র।’ তারপর তিনি লোকদের সামনে বললেন, ‘যারা মুহাম্মাদ (সা.)-এর আশেক তারা শোনো-তিনি মারা গেছেন।

আর যারা আল্লাহর আবেদ, খোদার আশেক, তারা জেনে রাখ আল্লাহ চিরঞ্জীব, মউত কখনো তার হবে না।’ আহ!! কী কঠিন দৃশ্য! এ দৃশ্যের চেয়ে কঠিন কোনো দৃশ্য কোনো মুমিনের জন্য হতে পারে না। মুমিনের অন্তর ক্ষতবিক্ষত এ দৃশ্য যখন কল্পনা করে।

রাসূল (সা.)-এর ওফাতের তারিখ : ঘটনাটি ১১ হিজরির ১২ রবিউল আউয়াল। এটি প্রসিদ্ধ মত। কোনো কোনো বর্ণনামতে ২ রবিউল আউয়াল।

দিনটি ছিল সোমবার। সুবহে সাদিক থেকে সাহাবায়ে কেরাম বসা। সবার চাহনি এক দিকে। এক লক্ষ্যে।

আজ রাসূল মৃত্যুশয্যায়। তিনি হয়তো চলে যাবেন। চলে যাবেন আমাদের ছেড়ে। কখনো সেই মিম্বারে দাঁড়াবেন না।

আমাদের সামনে কথা বলবেন না। জীবন চলার পাথেয় বাতলে দেবেন না। সব কল্পনায় ভাসছে আর অঝোর ধারায় কান্না আসছে! এ কান্না তো থামার নয়। বন্ধ করা তো দুষ্প্রাপ্য ব্যাপার। স্মৃতির ডানায় ভর করে সবাই ভাসছেন কল্পনার রাজ্যে।

মৃত্যুযন্ত্রণা : শুরু হলো মৃত্যুযন্ত্রণা। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) বাইরে অপেক্ষমাণ। সবার চোখের চাহনি এখন রাসূলের হুজরার দিকে।

বেকারার দৃষ্টিতে তাকিয়ে। একটি আনন্দদায়ক ও স্বস্তির সংবাদের আশায়। ভেতরে হজরত আয়েশা (রা.)। তেমন কোনো সান্ত্বনার সংবাদ বাইরে আসছে না। উৎকণ্ঠা আর চাপা কান্না সবার চোখে-মুখে।

আয়েশা (রা.) বলেন, তখন আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর (রা.) সেখানে এলেন। তার হাতে ছিল একটি মিসওয়াক। রাসূল তখন আমার শরীরে হেলান দেওয়া অবস্থায় ভর করে আছেন।

তিনি মিসওয়াকের প্রতি লক্ষ করছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনার জন্য কি মিসওয়াক নেব? তিনি মাথা নেড়ে নেওয়ার জন্য ইঙ্গিত করলেন। তারপর আমি মিসওয়াক নিয়ে তাঁর জন্য নরম করে দিলাম।

তিনি খুব সুন্দরভাবে মিসওয়াক করলেন। সামনে রাখা পানির পাত্রে তিনি হাত ডুবিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। নিশ্চয় মৃত্যু যন্ত্রণা একটি কঠিন ব্যাপার।’ (সহিহ বুখারি ২/৬৪০)।

মিসওয়াক করা শেষ করে রাসূল (সা.) হাত উঠিয়ে ছাদের দিকে দৃষ্টি তুলে ধরলেন। তাঁর দুই ঠোঁট নড়ে উঠল। তিনি বলছিলেন ‘আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। নিশ্চয়ই মৃত্যুর যন্ত্রণা কঠিন ব্যাপার।’

মিসওয়াক করার পর তিনি দোয়া করছিলেন-‘হে আল্লাহ! নবি, সিদ্দিক, শহিদ ও সৎ ব্যক্তিরা; যাদের তুমি পুরস্কৃত করেছ।

আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত কর। আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার প্রতি অনুগ্রহ কর। হে আল্লাহ! আমাকে রফিকে আ’লায় পৌঁছে দাও। হে আল্লাহ! তুমি রফিকে আ’লা।’ (সহিহ বুখারি ২/ ২৩৮-৬৪১)।

সে সময় রাসূল (সা.)-এর বয়স ছিল তেষট্টি বছর চার দিন। এখন সূর্যের উত্তপ্ত হওয়ার সময়। ক্রমেই সূর্য প্রখর হয়ে উঠছে।

তিনি পরম সত্য মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মুহূর্তেই চারদিকে দুঃখের আঁধার ছড়িয়ে গেল। কোথাও স্বস্তির আলোটুকু দেখা যাচ্ছে না।

দুঃখ বেদনার অতল সাগরে ডুবে পড়লেন সাহাবায়ে কেরাম (রা.)। হৃদয়কে বিদীর্ণকারী এ খবর সঙ্গে সঙ্গে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। মদিনাবাসী দুঃখের অতল সাগরে তলিয়ে যান।

আনাস (রা.) বলেন, যেদিন রাসূল (সা.) আমাদের কাছে আগমন করেন, সেদিনের মতো উজ্জ্বলতম দিন আর কখনো দেখিনি এবং যেদিন তিনি মৃত্যুবরণ করেন, সেদিনের মতো শোক ও অন্ধকার দিন আর দেখিনি।

ফাতেমা (রা.) দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বললেন, ‘হায় আব্বাজান! আল্লাহর ডাকে সাড়া দিলেন। হায় আব্বাজান! যার ঠিকানা জান্নাতুল ফেরদাউস।

হায় আব্বাজান! জিবরাইল (আ.)কে আপনার মৃত্যু সংবাদ জানাই।’

আহ! রাসূল (সা.) দুনিয়াতে নেই। একটু কল্পনা করে দেখুন এ সংবাদ সাহাবাদের কী হালত তৈরি করে দিয়েছিল! সিরাত পাঠ মধুর হলেও রাসূলের ইন্তেকাল হয়ে গেছে এ অংশটুকুতে এলে অন্তর এমনভাবে মোচড় দিয়ে ওঠে, মনে হয় কী জানি হারিয়ে ফেলেছি।

সাহাবায়ে কেরাম (রা.) রাসূল (সা.)কে কতটা ভালোবাসতেন তা এ অবস্থা থেকেই ফুটে ওঠে। নিজের জীবনের চেয়েও নবিজিকে তারা বেশি মুহব্বাত করতেন।

 

 

 

 

 

ফেসবুকে লাইক দিন

Latest Tweets

তারিখ অনুযায়ী খবর

October 2024
F S S M T W T
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031