ব্রেকিং নিউজঃ

ডিবির হারুনকে নিয়ে মুখ খুললেন আফ্রিদি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংহতি জানিয়েও সরব ছিলেন অনেক কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও ইউটিউবার। তাদের মধ্যে তৌহিদ আফ্রিদির নীরব ভূমিকা পালন করায় অনেকদিন ধরেই তার ওপর চড়াও ছিলেন নেটিজেনরা।

রীতিমতো বয়কটের ডাক ওঠে নেটিজেনদের, করা হয় ব্যাপক ট্রল। অবশেষে আন্দোলনে নীরব থাকার কারণ জানালেন আফ্রিদি।

গত মঙ্গলবার বিকালে সামাজিকমাধ্যমে একটি দীর্ঘ পোস্ট দেন আফ্রিদি। যদিও সেই পোস্টটি তার কিছুক্ষণ পর সরিয়ে দেন আফ্রিদি।

সেই পোস্টটি পাঠকদের সামনে হুবহু তুলে ধরা হল- ‘আসলে আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে আমি কখনোই কিছু বলতে চাইনি। কারণ, আমি কিছু বলতে গেলে সেখানে আরও অনেকের নাম যুক্ত হবে।

তাই আমি কাউকে দোষ না দিয়ে নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। যতদূর জানি বোবার নাকি কোনো শত্রু থাকে না।

কিন্তু যতদিন যাচ্ছে শত্রু বেড়েই চলছে, সঙ্গে বেড়েই চলছে আমাকে নিয়ে মিথ্যা বানোয়াট গল্পের সংখ্যা।

বাংলাদেশের যখন কোটা আন্দোলন শুরু হয় তখন আমি দুবাইতে ছিলাম। দেশের পরিস্থিতি তখন খুব খারাপ পর্যায়ে।

আর তখনই আমি সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করি যে আমি দেশে আসছি এবং কোটা আন্দোলনকারী ভাইদের পাশে দাঁড়াব। এই পোস্ট করার পরও আমি তেমন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হইনি।

আমি যখন শহিদ আবু সাঈদ ভাইয়ের ছবি আমার সব আইডিতে পোস্ট করি, কিছুক্ষণ পরেই আমাকে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার থেকে জিয়াউল আহসান কল দিয়ে বলে- তোমাকে একটা জিনিস জানাতে চাই তুমি যে রাষ্ট্রবিরোধী পোস্টগুলো দিয়েছ এগুলো এক্ষুনি তোমাকে সরাতে হবে।

তোমার সঙ্গে কে কে যুক্ত এগুলোতে?  এইটা শোনার পর আমি সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে দিই।

কিছুক্ষণ পরেই আমাকে ডিবি হারুন কলে বলে- এই তুমি কার কল কাটছো? তুমি জানো? তুমি, তোমার বাবা, তোমাদের টেলিভিশন, সব শেষ করে দিবে।

এখনি উনাকে কল ব্যাক কর, যা বলে শুনো। আমি ভয়ে পোস্ট ডিলিট করে দিই। আমার এখনো মনে আছে আমি সেদিন ভয়ে আমার পরিচিত কারোরই ফোন ধরিনি।

কিন্তু ডিবি হারুন আমাকে ফোন দিয়েই যাচ্ছিল। পর দিন আবার ডিবি হারুন আমাকে ফোন দেয়। বলে- তোমার নামে ওয়ারেন্ট বের হয়েছে, দেশে আসলেই কিন্তু তুমি এয়ারপোর্ট থেকে গ্রেপ্তার হবা।

তখন আমি বলি, চাচা আমি তো পোস্ট ডিলেট করে দিয়েছি। আমি আরও বলি, চাচা পোস্ট তো আমি করি নাই। আমার এডমিন করছে।

যদিও পোস্টটা আমি করেছিলাম কিন্তু তখন ভয়ে আমি তাকে এই মিথ্যাটা বলি। এটা শোনার পর উনি আমাকে বলে- তোমার ওইসব অ্যাডমিন সরাও। এরপর উনি আমাকে একটা অ্যাকাউন্টের লিঙ্ক দিয়ে বলে- উড়ে অ্যাকসেস দাও।

ডিবি হারুন আমাকে আরও বলে- আফ্রিদি দেশে আইসাই তুমি আগে আমার সঙ্গে দেখা করবা, তোমার নামে কিন্তু জঙ্গি মামলা হইছে। এরপর আমি আমার বাবার সঙ্গে সব শেয়ার করি।

তখন বাবা আমাকে বলে যে তুমি দেশে আসো। ফেসবুকে পোস্ট করা লাগবে না তুমি রাস্তায় নামো, তাহলে তো সমস্যা নাই। ঠিক এরপর দিন থেকেই পুরো বাংলাদেশ শাটডাউন থাকে।

যে কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকে। যখন শাটডাউন শেষ হয় আমি বাংলাদেশে আসি। বাংলাদেশে আসার পর আমি আর ডিবি হারুনের সঙ্গে যোগাযোগ করিনি। কিন্তু পরের দিনই আমাকে আবার ঘঞগঈ থেকে কল দিয়ে ডাকা হয়।

তারপর ওইখানে আমি যাই। গিয়ে দেখি ওরা হলিউড মুভির কেইস বোর্ডের মতো করে আমি সহ আরও কয়েকজন ইনফ্লুয়েন্সাদের ছবি টানিয়ে রেখেছে।

আমার এখনো মনে আছে, ওদের কাজ দেখে আমি আতঙ্কে একই জায়গায় ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম।

ওরা আমাকে বুঝিয়ে দিল, কথার বাইরে গেলে সব শেষ আমার। পরে একটা এজেন্সি আমাকে জরুরি তলব করে। আমি এরপর সেখানে যাই। যাওয়ার একটাই কারণ, এর আগেও আমরা সব ইনফ্লুয়েন্সাররা ওদের সঙ্গে কাজ করেছিলাম।

এজেন্সি আমাকে বলে- শুনো আফ্রিদি তুমি কার পক্ষে থাকবা বা বিপক্ষে থাকবা সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। তোমাকে ডাকার প্রধান কারণ হলো এই আন্দোলনে আমাদের দেশের যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, যেমন ধর মেট্রোরেল, সরকারি ভবনে ভাঙচুর ও আগুন এসব তো আর ছাত্রদের কাজ না।

এগুলো তো সাধারণ মানুষেরই টাকাই বানানো। আর সরকার যদি ভুল করে সেটা নিয়ে অবশ্যই সমালোচনা করতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজ করা যাবে না।

আর যারা যারা মারা গিয়েছে তাদের সুষ্ঠু বিচার চাইতে হবে। আমাদের মোটিভ হচ্ছে দেশের এই অবস্থায় সোশাল অ্যাওয়ার্নেস তৈরি করা।

সো তুমি এবং তোমার পরিচিত যেসব ইনফ্লুয়েন্সার আছে তাদেরকে নিয়ে এই অ্যাওয়ার্নেসটা সোশালি ক্রিয়েট করতে হবে। আমি এসব শুনে উনাকে ডিরেক্ট বললাম, ভাইয়া আমি তো এটা করতে পারবোই না আর যারা আছে তাদেরকে যদি পাঁচগুণ টাকা বেশিও দেওয়া হয়, তাও তারা করবে না।

এটা বিবেক আর ক্যারিয়ারের ব্যাপার। তখন এজেন্সি আমাকে বলে- আরে ভাই আমরা তো স্টুডেন্টের বিপক্ষে পোস্ট দিচ্ছি না, আচ্ছা তুমি একটা মিটিং ফিক্সড করে দাও, বাকিটা আমি ওদেরকে বুঝিয়ে দিব।

এরপর আমি ওদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হ্যাঁ-ওকে বলে ব্যাপারটা সেখানে শেষ করি। আপনারাই একবার চিন্তা করে দেখুন এই অবস্থায় কেউ কি স্টুডেন্টের পক্ষে ছাড়া ভিডিও বা পোস্ট করবে, পেমেন্ট যতই হোক? যাইহোক এরপর কয়েকজন ছোট ইনফ্লুয়েন্সারদেরকে নিয়ে আমি ওদের সঙ্গে মিটিং করিয়ে দিই।

মিটিংয়ে এজেন্সি সবাইকে সবকিছু এক্সপ্লেন করে। মিটিংয়ে সবাই পোস্ট এবং ভিডিও করার আশ্বাস দিলেও মিটিং শেষে কেউ ভিডিও দিতে আর রাজী ছিল না। এমনকি অনেকেই টাকা নিয়েছে কিন্তু ভিডিও দেয়নি।

এরপর এজেন্সি থেকে আমাকে সবার ভিডিওর জন্য আবার ফোন দেওয়া হলে, আমি ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করি। সবাই আমাকে জানায় এমন পরিস্থিতিতে কেউ ভিডিও বা পোস্ট দিতে পারবে না।

একটা সময় এজেন্সি যখন দেখ আমার এবং বাকি ইনফ্লুয়েন্সারদের কেউ কিছু করতে রাজী হচ্ছে না তখন তারা বলে অ্যাটলিস্ট সরকার যদি ভুল করে সেটা নিয়ে অবশ্যই সমালোচনা করতে হবে।

কিন্তু রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজ করা যাবে না এই পোস্টটা কর, ভিডিও করার দরকার নাই। একদিকে এত এত ছাত্র আর মানুষ মারা যাচ্ছিল আর অন্যদিকে এজেন্সি আমার সঙ্গে বারবার কন্টাক্ট করার চেষ্টা করছিল, তখন আমি ডিরেক্ট ওদের সঙ্গে কন্টাক্ট অফ করে দিই।

ছাত্রদের বিপক্ষে যাওয়া, কোনো ইনফ্লুয়েন্সারদেরকে হুমকি দিয়ে পোস্ট বা ভিডিও করা এবং ছাত্রবিরোধী কোনো ক্যাম্পেইনের সঙ্গে থাকা, এসবে আমার বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা নেই। আপনারা যেটা হুমকি দিয়ে ছাত্রদের বিপক্ষে ক্যাম্পেইনের কথা বলছেন সেই ক্যাম্পেইনের ব্যাপারে আমার জিরো পার্সেন্ট আইডিয়াও নেই।

আমার মিটিংটা ছিল শুধু কয়েকজন ছোট ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়া। এসব ঝামেলার মধ্যে হঠাৎ ডিবি হারুন আমাকে আবার কল দিয়ে বলে- তোমাকে দেখা করতে বলছিলাম, তুমি দেশে আইসা আমার সঙ্গে দেখা করলা না কেন?

তোমার নামে যে মামলা হয়েছে এটার একটা ব্যবস্থা তো করতে হবে তাই না? সে এসব কথা বলে আমাকে আবার তার অফিসে ডাকে। যাওয়ার পর সে আমার সঙ্গে আমার মামলা নিয়ে একটা কথাও বলল না।

আমাকে সে বলে তার এক ভিডিও নাকি ভাইরাল হয়েছে, মানুষ নাকি তার ফেইস চেঞ্জ করে ভাইরাল করছে। আমি তখন তার কাছ থেকে ভিডিওটা দেখতে চাই।

আমি তখনও জানতাম না তার কি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিও দেখে আমি বুঝতে পারি যে এটা তারই ভিডিও, তারপর সে বলে তার ভিডিও অনলাইন থেকে রিমুভ করে দিতে হবে।

আমি তখন তাকে বলি- চাচা আপনি সাইবার সিকিউরিটির সঙ্গে কথা বলেন ওরাই পারবে। কিন্তু সে বারবার আমাকে ফোর্স করে ভিডিওটা রিমুভ করে দিতে। পরে আমি তাকে বলি এইটা তো রিমুভ করা যাবে না।

এটা বলার সঙ্গে সঙ্গে সে এবার আমার মামলা নিয়ে কথা বলা শুরু করে। আমাকে বলে তোমার নামে তো জঙ্গি মামলা হয়েছে, তোমাকে কিন্তু এই মুহূর্তে অ্যারেস্ট করা যায়। আমাকে সে ইনডাইরেক্টলি হুমকি দেয়।

তারপর তাকে দেখানোর জন্য আমি কয়েকজনকে ফোন দিই, তার ভিডিওটা রিমুভ করা যাবে কিনা। কিন্তু সবাই না বলে। এরপর তাকে আমি বলি যে আমি বাসায় গিয়ে একটা ব্যবস্থা করছি।

আপনারা যে কোনো সেলিব্রেটিকেই জিজ্ঞাসা করুন, তারাই বলবে, ডিবি হারুনের কাছে যে একবার সাহায্যের জন্য গিয়েছে তাদেরকে সে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেছে। তার ফেমাস হওয়ার একটা নেশা ছিল, সেটা তার পেইজের ভিডিও দেখলেই আপনারা বুঝবেন।

যারাই তার কাছে যায়, তাদেরকে ভাত খাইয়ে সেটার ভিডিও করে সে ছেড়ে দেয়। সে তার ক্ষমতার অপব্যবহার এত বাজেভাবে করত যে, আমি এবং আমার এক ইউটিউবার বন্ধুকে দিয়ে সে তার রিসোর্টের প্রমোশনে যেতে বাধ্য করেছিল।

তার রিসোর্টের প্রমোশনে আমরা এতোটাই হেল্পলেস ছিলাম যে, পেমেন্ট পাওয়া তো দূরের কথা, নিজে খরচে, তার দেওয়া তারিখের মধ্যেই নো মেটার হোয়াট শুট করে, তার বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই পোস্ট করতে হয়েছিল।

ইভেন প্রায়ই সে আমাকে তার অফিসে ডেকে ভøগু করতে বলতো। আর আল্লাহর রহমতে ছোটবেলা থেকেই যে পরিমাণ টাকা দেখে বড় হইছি আমার টাকার প্রতি কোনো লোভ নাই।

ওপরে মহান আল্লাহতায়ালা আছেন, উনি দেখছেন, উনি সাক্ষী আছেন, আমি কি করছি। আল্লাহ যদি মনে করেন আমি কোনো ভুল করছি তাহলে আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিবেন। ভয়ে চুপ ছিলাম এটাই আমার সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল।

আর সেটার শাস্তি আল্লাহ আমাকে দিচ্ছেন। সেটার জন্য আমি আপনাদের কাছেও ক্ষমা চাচ্ছি। আমার শুভাকাক্সক্ষী জানে এবং বিশ্বাস করে আমি কেমন। আপনি পাব্লিকলি যখন কিছু করবেন তখন আপনার পক্ষে বিপক্ষে অনেক মানুষ কথা বলবে।

কিন্তু বিপক্ষের মানুষগুলো ভালো কাজে চুপ থাকে, আর যখনই কোনো অজুহাত পায় সেটাকেই তিলকে তাল বানিয়ে ফেলে।

কথা আগেও হতো, এখনো হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হবে, কিন্তু তাই বলে আমি কখনো থামিনি এবং থামবও না ইনশাহআল্লাহ। সেটার একমাত্র কারণ হলো আমার ওয়েলওইশারদের সমর্থন, এর আগেও থেমে যেতাম কিন্তু তারা আমাকে থামতে দেয়নি এবং আজকেও দিচ্ছে না।

একটা ব্যাপার বলতেই হয়, নিউজ করেন ঠিক আছে, দেশটা স্বাধীন হয়েছে সবারই কথা বলার অধিকার আছে কিন্তু যাদের আমি চিনিই না তাদের সঙ্গে দয়া করে আমাকে ইনভলড করবেন না।

মানুষ আমার ব্যাপারে যা ইচ্ছে তাই বলে বেড়াচ্ছে। আর আমি চাইলে তো অনেকের ব্যাপারে প্রমাণসহ বলতে পারি। কিন্তু আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি দএভরিওয়ান ডিজার্ভস অ্যা সেকেন্ড চান্স।’

ফেসবুকে লাইক দিন

Latest Tweets

তারিখ অনুযায়ী খবর

October 2024
F S S M T W T
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031