গ্রেফতারকৃতদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে কল্পকাহিনি রচনা করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল

‘মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে অবৈধ সরকার’ এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে রিমান্ড শেষে আদালতে নিয়ে আসার যে চিত্র গণমাধ্যমে এসেছে, তা যে কোনো বিবেকবান মানুষকে আলোড়িত করবে। রিমান্ডে এমনভাবে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে যে তিনি দাঁড়াতেই পারছেন না।

কোটা আন্দোলনের অন্যতম তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদারকে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা তুলে নিয়ে গিয়েছে। এ ধরনের বর্বরোচিত অমানবিক কাজ পুরো সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে।

শনিবার বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, সরকার অবৈধ পন্থায় ক্ষমতায় আসার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা আগলে রাখছে। এজন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে।

এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল, সেনাবাহিনীর ৫৭ জন চৌকস অফিসারকে হত্যা, সাজানো রায় দিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দল ও মতের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে।

৫০ লাখ নেতাকর্মীর নামে বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়ে হয়রানি এবং খুন-গুম, রিমান্ডের নামে নির্যাতন অব্যাহত রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, সে ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকার সৃষ্ট সন্ত্রাসের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে হত্যা-নির্যাতন করেছে।

এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সাজানো মামলার মাধ্যমে বিরোধী মতের নেতাদের হত্যা, গ্রেফতার, গুলি করে আদালতে উঠানোর আগেই নির্যাতনে পঙ্গু করা হচ্ছে।

বিচার বিভাগকে দিয়ে রিমান্ডে নিয়ে আবারো নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সেখানে রিমান্ডের ন্যূনতম আইন মানা হচ্ছে না। গ্রেফতারকৃতদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে কল্পকাহিনি রচনা করা হচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে গ্রেফতারের পাশাপাশি এখন কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরও ব্লকরেড দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে।

আইডি কার্ড দেখামাত্রই গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের গুম করে কিভাবে নির্যাতন করে, দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে, তা তাদের শরীরের ক্ষতচিহ্ন দেখলেই অনুধাবন করা যাচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার প্রথম থেকেই সরকারি গুণ্ডাবাহিনীকে কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনে লেলিয়ে দেয়। তারা এতই রক্ত পিপাসু হয়ে গেছে যে আরও কেন হতাহত ও রক্তপাত হলো না? তা রংপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী নেতাদের বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে বিপন্ন দেশের মানুষ। গত ১৭ বছর যাবত পৈশাচিক নির্যাতন, খুন, গুম, হত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে এ সরকারের ওপর বিক্ষুব্ধ হয়েছে জনগণ।

জনগণ সুযোগ পেলেই মাঠে নেমে আসে এবং সরকারের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছে। নির্বাচনসহ বিভিন্ন সময় জনগণ বারবার সরকারকে পদত্যাগ করার বার্তা দিয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, হেলিকপ্টারে থেকে গুলি করা না হলে জানালা ধরে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় শিশু সামির কীভাবে নিহত হলো?
সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ছাত্রদের গুলি করে পঙ্গু করে দেওয়ার পর, তাদেরকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়া, মায়া কান্না ও সাহায্য করার কথা বলা জনগণের সঙ্গে প্রতারণার আর একটি নজির।

সব হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগের আহ্বান জানান তিনি।

বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, সরকার জনরোষে পড়ার ভয়ে জোর করে ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে রাখার লক্ষ্যে দেশে কারফিউ দিয়ে রেলসহ সব যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে রেখেছে।

জনগণকে কর্মহীন রেখে অনাহারে দিনাতিপাত করতে বাধ্য করছে।  দ্রব্যমূল্য দিন দিন মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে জাতি দ্রুত মুক্তি চায়, এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সমাধান।

মির্জা ফখরুল বলেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খানকে গভীর রাতে বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গ্রেফতার করে এবং রাতভর নির্যাতন চালায়। তারপর তাকে মেট্রোরেল পোড়ানোর বানোয়াট মামলায় জড়িয়ে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে গুলিবিদ্ধ বাংলাদেশ ন্যাপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নয়াব আলীর একটি চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জহিরউদ্দিন স্বপন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ জন জাতীয় নেতা ও অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে কারান্তরীণ করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, শুক্রবার যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের বাসায় তল্লাশি করে তাকে না পেয়ে তার ভায়রা, শ্যালক ও শ্যালকের ছেলেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।

গণঅধিকার পরিষদের (একাংশ) উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফকে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

তিনি বলেন, বর্তমানে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের চেহারা কী বীভৎস রূপ ধারণ করেছে, সাংবাদিক নির্যাতন ও গণহত্যার মধ্য দিয়ে তা ফুটে উঠেছে।

সরকারি বাহিনীর হাতে মাত্র এক সপ্তাহে চার সাংবাদিক হত্যা এবং দুই শতাধিক সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনার বিচার না করে প্রতিবাদী সাংবাদিকদের গ্রেফতার সরকারের একটি কু-নজির।

সরকারের প্রতিহিংসা থেকে সাংবাদিকরাও রেহাই পাচ্ছেন না। এ সরকারের আমলে ৬৬ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন শত শত সাংবাদিক।

অনেক সাংবাদিককে প্রাণ বাঁচাতে দেশান্তরিত হতে হয়েছে। সম্পাদক ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে একটা ভীতির পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।

অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং নিঃশর্ত মুক্তির আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

ফেসবুকে লাইক দিন

Latest Tweets

তারিখ অনুযায়ী খবর

March 2025
F S S M T W T
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031