ব্রেকিং নিউজঃ

কাতার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রতি শেখ হাসিনার ৭ পরামর্শ

ভবিষ্যৎ নেতা হতে কাতার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সাতটি পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে এই পরামর্শ দেন তিনি। আজ মঙ্গলবার দুপুরে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্স কমপ্লেক্স অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।

সেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আমি আমার জীবনের অভিজ্ঞতা এবং সংগ্রাম থেকে ভবিষ্যৎ নেতাদের জন্য কয়েকটি পরামর্শ তুলে ধরতে চাই।

শেখ হাসিনার সাতটি পরামর্শ হলো- ১. নেতার মূল্যবোধ থাকতে হবে, ২. লক্ষ্যের প্রতি অটল থাকতে হবে, ৩. লক্ষ্য অর্জনে পরিপূর্ণ ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকতে হবে, ৪. দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী নেতৃত্ব দিতে হবে এবং সমাজে ‘চেঞ্জ মেকার’ হতে হবে, ৫. জনগণ এবং দলের ওপর আস্থা রাখতে হবে, ৬. মাতৃত্বের চেতনাকে জাগিয়ে তুলতে হবে, ৭. নতুন এবং ভবিষ্যতকে গ্রহণ করা।

জীবনে লক্ষ্য থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, জীবনে ভিশন এবং মিশন থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর লক্ষ্যে পৌঁছাতে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে।

জ্ঞান অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ছাড়া কোনো জাঁতি উন্নতি করতে পারে না। এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর তার সরকার শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে।

বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা একটি জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাই।

স্মার্ট বাংলাদেশে একটি স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট সমাজ এবং স্মার্ট মানবসম্পদ থাকবে। প্রযুক্তির বিকাশে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, জনগণকে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে, যাতে তারা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে অবদান রাখতে পারে। বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রাথমিক পর্যায় থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করছি।

সারাদেশে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও ইনকিউবেশন সেন্টার এবং হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের উদ্দেশ্য হলো পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এ ক্ষেত্রে ন্যানো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য একটি আইন পাসের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে কাতার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম, ২৩ বছরের সংগ্রাম শেষে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নিহত হওয়া এবং পরবর্তী সামরিক শাসন এবং ২১ বছর পর আওয়ামী লীগের পুনরায় ক্ষমতায় আসার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তার নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে শক্ত ভিত্ত গড়ে তোলে। ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলকে বাংলাদেশের ইতিহাসে হত্যা, সন্ত্রাস, দুর্নীতির আরেকটি অন্ধকার যুগ হিসেবে মন্তব্য করেন তিনি।

২০০৮ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, গত সাড়ে ১৪ বছরে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’র জন্য দেশকে প্রস্তুত করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ এবং নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থ-সামাজিক খাতের সব বিভাগে বাংলাদেশ অসাধারণ অগ্রগতি লাভ করেছে।

তিনি বলেন, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়, আমাদের লক্ষ্য ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ-আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া।

এরইমধ্যে বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে। সরকারের নানা কর্মসূচির কারণে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমে আসার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৫-৬ সালে দারিদ্রের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বর্তমানে দারিদ্রের হার কমে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ এবং অতি দারিদ্রের হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সফলতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি, সঙ্গে ৪৬০ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারের জিডিপি।

যেখানে ২০০৫-০৬ সালে দেশের জিডিপি ছিল মাত্র ৬০ বিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু আয় ২০০৫-০৬ সালে ৫৪৩ ডলার, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তা বেড়ে ২০২২ সালে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৮২৪ ডলার। শেখ হাসিনা বলেন, আজকের বাংলাদেশ একটি বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।

এটিকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। দেশে ক্ষুধা, দারিদ্র, অপুষ্টি, নিরক্ষরতা দ্রুত বিলুপ্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, এই অগ্রগতি কোনো ‘মিরাকল’ নয়, এটি কষ্টার্জিত সফলতা। এটা আমাদের নারী-পুরুষের সম্মিলিত কাজ। আমি শুধুমাত্র তাদের কাক্সিক্ষত পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করেছি।

বঙ্গবন্ধু কন্যা আরও বলেন, বাংলাদেশ আজ যে অবস্থানে এসেছে এই অবস্থানে পৌঁছানোর যাত্রা সহজ ছিল না। এজন্য তাকে (শেখ হাসিনা) সারাজীবন অগ্নিপরীক্ষা এবং নিপীড়নের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। ১৫ আগস্ট পরিবারের সবাইকে হারানোর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমার বাবাকে তার জীবনের প্রায় এক চতুর্থাংশ কারাগারে কাটাতে হয়েছে।

আমরা বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় আমার মা, তিন ভাই, দুই ভাতৃবধূ, চাচাসহ পরিবারের ১৮ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। বিদেশে থাকা ছোট বোন শেখ রেহানা এবং তার নিজের প্রাণে বেঁচে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ ছয় বছর আমরা বিদেশে নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছি।

১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাবার ক্ষুধা-দারিদ্র, নিরক্ষরতা মুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আমি ফিরে এসেছি। দেশে ফিরে মানুষের খাবার ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। বিভিন্ন সময় হামলার শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্তত ১৯ বার আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়।

এরমধ্যে ২০০৪ সালে আগস্টে আমার ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। সে হামলায় প্রাণে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতাকর্মী নিহত হন, আহত হন কয়েকশ। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমরণ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত প্রতিকূলতার মধ্যেও কেবল দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে গেছি। যতদিন বেঁচে আছেন ততদিন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ফেসবুকে লাইক দিন

Latest Tweets

তারিখ অনুযায়ী খবর

May 2024
F S S M T W T
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31