সন্তান প্রসবে সিজার এড়ানো যাবে যেভাবে

প্রসব জটিলতায় ভুগছেন এমন নারীদের মিসোপ্রোস্টল জুস এবং ফোলি ক্যাথেটার পদ্ধতি প্রয়োগ করে সিজার অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব বলে এক জরিপ প্রতিবেদনে তথ্য উঠে এসেছে।

এতে বলা হয়, প্রসবের আগেই পানি ভেঙে যাওয়া, সংকুচিত জরায়ুসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন এমন গর্ভবতীদের প্রায় ৫০ শতাংশেরই সিজার ছাড়াই বাচ্চা প্রসব করানো সম্ভব। যদি মিসোপ্রোস্টল জুস এবং ফোলি ক্যাথেটার পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

শনিবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগের করা এক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মুনিরা ফেরদৌসী।

তিনি জানান, ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত এই দুই বছরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি হওয়া গর্ভবতীদের মধ্যে ২০০ জনকে জরিপের আওতায় আনা হয়। যাদের মধ্যে ১০০ জন মিসোপ্রোস্টল গ্রুপে এবং বাকি ১০০ জন ছিল ফোলি ক্যাথেটার গ্রুপে। জরিপে অন্তর্ভুক্ত নারীদের ১৪৮ জনই গৃহিনী এবং ১৮ জন ছিলেন কর্মজীবী।

জরিপে দেখা গেছে, মিসোপ্রোস্টল জুসের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসবের হার ছিল ৬৪ শতাংশ এবং ফোলি ক্যাথেটার ব্যবহার করে ৫৮ শতাংশ ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি করানো সম্ভব হয়েছে। আর মিসোপ্রোস্টলের অন্তর্ভুক্তদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ এবং ফোলি ক্যাথেটারদের মধ্যে ৪২ শতাংশ সিজার করাতে হয়েছে।

জরিপের তথ্যানুযায়ী, ২৫ বছরের কম বয়সী ছিলেন ১৮ জন, যাদের ৪ জনকে শুধু মিসোপ্রোস্টল এবং ১০ জনকে মিসোপ্রোস্টল জুস ও ফোলি ক্যাথেটার পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী ১১৪ জন গর্ভবতীদের মধ্যে ৬৪ জন মিসোপ্রোস্টল জুস ও ফোলি ক্যাথেটার এবং ৫০ জনকে মিসোপ্রোস্টল প্রয়োগ করা হয়েছে। ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৫৪ জনের মধ্যে ২২ জনকে মিসোপ্রোস্টল জুস ও ফোলি ক্যাথেটার এবং ৩২ জনকে মিসোপ্রোস্টল প্রয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে ১৪ জনের মধ্যে ৪ জন মিসোপ্রোস্টল জুস ও ফোলি ক্যাথেটার এবং ১০ জনকে মিসোপ্রোস্টল প্রয়োগ করা হয়েছে।

অধ্যাপক ডা. মুনিরা ফেরদৌসী বলেন, কোনো দক্ষ লোক দিয়ে এই পদ্ধতিতে বাচ্চা প্রসব করালে ঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে অদক্ষ লোকের ক্ষেত্রে বেশ ঝুঁকি রয়েছে। এক্ষেত্রে সচেতনতার পাশাপাশি গর্ভবতীকে ভ্যাজাইনাল ডেলিভারির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতকরণ এবং কাউন্সিলিং করতে হবে। এ ছাড়া গর্ভধারণের পর থেকে কমপক্ষে ৪ বার চেকআপ করানো ও প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।

সিজার সম্পর্কে তিনি বলেন, সিজার যে একেবারেই হবে না বিষয়টি তা নয়। যাদের প্রয়োজন হবে তাদের অবশ্যই সিজার করাতে হবে। ইদানিং অনেকেই কষ্ট এড়াতে স্বেচ্ছায় সিজারিয়ানে ঝুঁকছেন। এই চিন্তা-চেতনা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।

ডা. মুনিরা ফেরদৌসী বলেন, শিশু জন্মে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের ফলে ইনফেকশন ও মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, অঙ্গহানি, জমাট রক্ত ইত্যাদির কারণে মায়েদের সুস্থতা ফিরে পেতে প্রাকৃতিক প্রসবের তুলনায় অনেক দীর্ঘ সময় লাগে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।  এ ছাড়া সিজারের কারণে প্রাকৃতিক জন্মের লাভজনক দিকগুলোও নষ্ট হতে পারে।

জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. খলিলুর রহমান, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি প্রমুখ।

ফেসবুকে লাইক দিন

Latest Tweets

তারিখ অনুযায়ী খবর

June 2023
F S S M T W T
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30