ব্রেকিং নিউজঃ

মধ্যবয়স্ক একজন বাবা

মধ্যবয়স্ক একজন বাবা। মুখে সফেদ দাড়ি। মাস্ক দিয়ে পুরো মুখ ঢাকা। পুরোনো একটি মোটর সাইকেল নিয়ে হাতিরঝিলের রামপুরা অংশে দাড়িয়ে।

খুব মৃদু কন্ঠে ডাকছেন, যাবেন ভাই? পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছেন অনেকেই। কৌতূহলী মন। দাড়িয়ে গেলাম।

দীর্ঘ সময় হয়তো যাত্রীর সন্ধান করছেন। কপালের পুরো অংশ ঘামে ভেজা। পাঞ্জাবীটাও ভিজে গেছে তপ্ত গরমে।

কারওয়ান বাজার যাবো। বিকেলে অফিস। রাতে টকশো থাকায় আমার হাতে বাড়তি কাপড় ও বেশ কিছু কাগজ।

এগুলো নিয়ে মোটর সাইকেলে উঠবো কি উঠবো না… এই ভাবনার মাঝে আবারো ডাক, যাবেন ভাই? কতক্ষণ তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে আমি। ছলছল করছে চোখ। মনে হচ্ছে, এখনই পানি গড়িয়ে পড়বে।

বাসা থেকে বারবার নিষেধ করার পরও মনকে মানাতে পারলাম না। চরে বসলাম মোটরসাইকেলে।

কিন্তু মোটর সাইকেল চালাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেই বাবার। মনে হচ্ছে তাঁর শরীর কাপছে। মনে হচ্ছে এখনই পড়ে যাবে। বিনয়ের সঙ্গে জানতে চাইলাম কোন সমস্যা? বললেন, না বাবা।

কোন সমস্যা নেই। তাহলে কাপছেন কেনো? বললেন, ডায়বেটিস আছে তো। খালি পেটে একটু সমস্যা হয়। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না।

তিনি ক্ষুধার্ত। কিছুটা অধিকারের সূরেই বললাম, এখনো খাননি কেনো? সরল স্বীকারোক্তিঃ টাকা নেই বাবা। কথা বাড়ালাম না। কিন্তু তিনি নিজ থেকেই বললেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত রাইড শেয়ারিং করবেন।

তারপর যা টাকা হাতে পাবেন। তা দিয়ে বাজার করে বাসায় যাবেন। রাতে সবাই মিলে খাবেন। ইনশাআল্লাহ… কি বলবো খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমি নির্বাক। কস্টে আমার বুক ভেঙ্গে যাচ্ছে।

মনে হচ্ছে, চিৎকার করে কাঁদি। নিজেকে সামলে নিলাম। কারওয়ান বাজার রেল গেট পেড়িয়ে বললাম, মোটর সাইকেল থামান। কেনো?

আমার ক্ষুধা লাগছে। পেট্রোবাংলার সামনে এসে মোটরসাইকেল থামানো হলো। এবার মাস্ক নামিয়ে তিনি বললেন, বাবারে আমি বুঝতে পেরেছি।

কিন্তু আমি তো খাবো না। অফিস পর্যন্ত না এসে সেখানেই নেমে গেলাম। কিন্তু বাড়তি একটি টাকাও আমি তাঁকে দিতে পারিনি।

প্রচন্ড আত্মমর্যাদাবান এই পিতাই আমাদের সমাজের প্রতিচ্ছবি। গোলামির জিঞ্জর ভেঙ্গে কেউ তাদের বের করে আনতে পারবে না।

কারণ, সিঙ্গাপুরের মানুষ মেগা উন্নয়ন খেয়ে পেট ভরে। তেল,চালসহ নিত্য পণ্যের বাজারে তাঁরা জীবনে দু’একবার শখ করে যায়। ক্ষমা করো, হে দুর্ভাগা জাতি। ক্ষমা করো ক্ষুধার্ত সব বাবা…

ফেসবুকে লাইক দিন

Latest Tweets

তারিখ অনুযায়ী খবর

October 2024
F S S M T W T
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031