ব্রেকিং নিউজঃ

কমনওয়েলথের প্যানেল আলোচনায় বক্তারা

করোনা ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবেলায় চাই পারস্পরিক সহযোগিতা

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশ ও জ্যামাইকার মত উপকূলীয় দেশগুলোকে। তার ওপর কোভিড-১৯এর প্রাদুর্ভাব পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলেছে।

এই বৈশ্বিক মহামারীর কারণে বিপাকে পড়েছে পর্যটন নির্ভর প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোও। কোভিড-১৯ ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মত প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে অর্থনীতি সচল রাখতে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলো ডিজিটাল গ্রিন টেকনোলজি ইনফরমেশন হাব ও ডিজিটাল মার্কেট প্লেস চালুর মত উদ্যোগ নিতে পারে।

সোমবার (২৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত ‘টুওয়ার্ডস অ্যা গ্রিন এন্ড রিজিলিয়েন্ট বিজনেস রিকোভারি’ বিষয়ক সেশনের আলোচনায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।

কমনওয়েলথের বিটুবি কানেক্টিভিটি ক্লাস্টারের অংশ হিসেবে ‘কানেক্টিং দ্য কমনওয়েলথ প্রাইভেট সেক্টর ফর অ্যা ডিজিটাল অ্যান্ড গ্রিন রিকভারি’ শীর্ষক ওয়েবিনারের অংশ হিসেবে এই সেশন আলোচনার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় ওয়েবিনারটি আয়োজন করে কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট।

‘টুওয়ার্ডস অ্যা গ্রিন এন্ড রিজিলিয়েন্ট বিজনেস রিকোভারি’ বিষয়ক সেশনটি সঞ্চালনা করেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) মাননীয় প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম।

বাংলাদেশের মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, প্যাসিফিক আইল্যান্ড প্রাইভেট সেক্টর এসোসিয়েশনের মাননীয় চেয়ারম্যান স্টিফেন লিয়ন, জ্যামাইকার মাননীয় ইকোনমিক গ্রোথ অ্যান্ড জব ক্রিয়েশন মিনিস্টার আওবিন হিল এবং কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ ও বিনিয়োগ কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামান্থা কোহেন সিভিও এই সেশনে আলোচনায় অংশ নেন।

তাদের আলোচনায় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের প্রাণবন্ত এবং টেকসই মডেল রুপান্তর এবং এই প্রক্রিয়ায় সরকারের সহায়তার বিষয়টি উঠে আসে। এছাড়া বেসরকারি খাতের পরিবেশবান্ধব পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় কমনওয়েলথের ভূমিকা নিয়েও আলোচনা হয়।

সেশনের শুরুতে এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম চলতি বছর আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বাষির্কী উদযাপনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতাই ছিল তার নেতৃত্বের ভিত্তি, যা কমনওয়েলথও অনুসরণ করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ গৃহস্থালী পর্যায়ে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারে নেতৃত্বস্থানীয় অবস্থানে আছে।

শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা কোভিড-১৯ ছাড়াও বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি বেশ ভালভাবেই মোকাবেলা করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১ হাজার ২১০ কোটি ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজের সহায়তায় আমাদের অর্থনীতি ৫ দশমিক ২৪ জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ কোভিড-১৯ এর ধাক্কা সামলে উঠেছে। ২০২১ ও ২০২২ সালে আমরা কোভিড-পূর্ব উন্নয়নের ধারায় ফিরে আসার পরিকল্পনা করছি।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী শুরুর পর থেকেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পাশাপাশি এফবিসিসিআই ফ্রন্টলাইনার হিসেবে বেসরকারি খাতের পুনরুদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছে।

এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট বলেন, কোভিড-১৯ দ্বারা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত খাতের মধ্যে প্রথম দিকেই রয়েছে পর্যটন ও বিমান খাত। এ ক্ষতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ অর্থ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখাসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২১০০ সালের জন্য ডেল্টা প্লান বাস্তবায়নে কাজ করছে। জ্যামাইকার মতো ক্ষতিগ্রস্ত কমনওয়েলথের অন্যান্য দেশগুলোর সাথে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারি।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবাদে আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। তিনি কমনওয়েলথের অধীন ডিজিটাল গ্রিন টেকনোলজি ইনফরমেশন হাব চালুর সুপারিশ করেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোভিড পরবর্তী নিউ নরমালে স্থিতিশীল, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যত নিশ্চিতে আমাদের আগের চেয়ে আরো বেশি ডিজিটালাইজ করা, ঐক্যবদ্ধ হওয়া ও পারস্পরিক সহযোগিতার প্রয়োজন আছে।

তিনি বলেন, আমরা জানি, এটা সবার জন্যই কঠিন সময়। তবে আমরা চাই, ব্রান্ডগুলো বিক্রয় আদেশের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে যাবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতার দায়িত্ব আমদানিকারক দেশগুলোর সরকারের ওপরেই বর্তায়।

শাহরিয়ার আলম বলেন, আমরা পশ্চিমা দেশগুলোয় কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমাদের দেশে কোভিড সংক্রমণ ও মৃতুহার কম হলেও আমরা যেসব দেশে পণ্য বিক্রি করি, সেসব দেশের পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত।

জ্যামাইকার ইকোনমিক গ্রোথ অ্যান্ড জব ক্রিয়েশন মিনিস্টার আওবিন হিল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি ও কোভিড-১৯ মিলে মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এসময়ে ইকমাসের্র চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। জ্যামাইকানরা অনলাইন নির্ভর ব্যবসায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা জ্বালানির চাহিদা পূরণে আরো পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি চাই।

প্যাসিফিক আইল্যান্ড প্রাইভেট সেক্টর এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান স্টিফেন লিয়ন বলেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অনেক দেশের জন্য পর্যটন বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত। কোভিড-১৯ এর কারণে পর্যটন ভেস্তে গেছে। এতে আমরা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছি।

তিনি বলেন, কোভিডের কারণে পরিবহন খাতও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে পরিবহন বাবদ ব্যয়ও বেড়ে গেছে।

কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ এবং বিনিয়োগ কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামান্থা কোহেন সিভিও বলেন, যুক্তরাজ্যে কিছু একটা ঘটলে, তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে। এখন আমরা বুঝি যে, সবাই একে অপরের সঙ্গে যুক্ত।

তিনি বলেন, আমি মনে করি ডিজিটাল মার্কেট প্লেস তৈরি সবার জন্য উপকারী হবে। কারণ এটা টেকসই ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি করে।

মূল ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের মাননীয় রাষ্ট্রদূত সাইদা মুনা তাসনিম। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, যুক্তরাজ্যের রফতানি বিষয়ক মাননীয় মন্ত্রী গ্রাহাম স্টুয়ার্ট, মালয়েশিয়ার যোগাযোগ ও মাল্টিমিডিয়া বিষয়ক মাননীয় মন্ত্রী দাতো সাইফুদ্দিন আবদুল্লাহ, ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মাননীয় প্রেসিডেন্ট সঙ্গীতা রেড্ডিসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, ব্যবসায়ী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশ নেন।

ফেসবুকে লাইক দিন

Latest Tweets

তারিখ অনুযায়ী খবর

May 2024
F S S M T W T
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31