গণতন্ত্রের কবরের উপর নৃত্য করছেন মানসিক রোগাগ্রস্থ সরকার: ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী

শনিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডি ধানমন্ডিস্থ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিনের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, আমাদের সরকার আজ রোগগ্রস্থ |
বাংলাদেশের গণতন্ত্র আজ কবরে শায়িত। এইতো সেই কবরের উপর নিত্য করছেন মানষিক রোগগ্রস্থ সরকার|
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমাদের দেশে কেউ না খেয়ে নাই কোন মানুষ। হ্যাঁ না খেয়ে নাই কথাটা কিছুটা সত্য। কিন্তু না খেয়ে না থাকলেও যথার্থ পুষ্টি নাই। সেটা আরও খারাপ। না খেয়ে থাকলে আন্দোলন হবে মানুষ ক্ষিপ্ত হবে। কিন্তু মানুষ এখন খেতে পাচ্ছে বলে আন্দোলন করার স্পৃহাটা নেই। এটাই পুঁজিবাদের ধর্ম।
তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দেশের নিপীড়িত শোষিত মানুষের মুক্তি এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার একমাত্র তরুণদের পক্ষেই সম্ভব, এই জন্য প্রয়োজন গণআন্দোলন।
আমাদের বয়স হয়েছে। এখন আমাদের অবলম্বন তরুণরা। তারাই বাংলার নিপীড়িত মানুষকে মুক্তি দিবে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে। তাই তরুণরা তোমাদের কাজটি ঠিক মতো করো। চিন্তা করো না। শুধু দেখো তোমাদের পাশে আমরা আছি কিনা। সামনে থাকবে তোমরা পিছনে থাকবো আমরা। তবেই পরিবর্তন আসবে। পরিবর্তন ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এজন্য মধ্যবর্তী নির্বাচন মানে একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তুতি নিতে হবে। এইযে এখন ফাঁসি আইন হচ্ছে। এটি কোনো সমাধান নয় এটি একটি বুলি মাত্র। এসবের পরিবর্তন করতে হলে তরুণদেরকে জেগে উঠতে হবে।
আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, আইন করলেই ধর্ষণ বন্ধ হবে না। ফাঁসির আদেশ দিয়ে ধর্ষন ঠেকানো যাবে না। মূলত আমাদের দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। রাজনৈতিক প্রভাবে যেভাবে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। ফাঁসি দিলেও তাতে ধর্ষণ বন্ধ হবে না। সবাই দেখেছে কারা ধর্ষণ করছে, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে যে দেলোয়ার বাহিনী ধর্ষণে আলোচনায় এসেছে সে কিভাবে এসেছে সবাই তা দেখেছে। সে উঠে এসেছে নির্বাচনের কেন্দ্র দখলের মাধ্যমে। ওসি প্রদীপ কিভাবে একজন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তাকে কিভাবে গুলি করে। এটা শুধুমাত্র ভারতীয় ব্যাকআপে। কারণ তিনি মার্ডার করার পর ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করেছেন এটা আমার কথা নয় তদন্ত প্রতিবেদনের কথা। যখন ওসি থেকে শুরু করে চকিদার লেভেলে সর্বত্রই ভারতীয়দের আধিপত্য এবং ভোট ডাকাতির জন্য দেলোয়ার বাহিনীদেরকে সরকার তৈরি করে, তখন এ সরকারের অবসান না ঘটানো পর্যন্ত ধর্ষণ থেকে এ জাতিকে রক্ষা করা যাবে না।
নুর বলেন, এই স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ৯০ এ যেভাবে আন্দোলন হয়েছিল সেভাবেই আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আমাদের দাবি একটাই যদি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যদি সংবিধান সংশোধন করে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার পূর্ণস্থাপনা করতে হয় তাহলে সেটাই করতে হবে। রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য। আইন ও জনগণের জন্য তাই রাষ্ট্র এবং জনগণের প্রয়োজনে আইনকে ১০০ বার সংশোধন করা যাবে।
নূর বলেন, আলুর দাম ৫০ টাকা, মোটা চালের দাম ৬০ টাকা। কিভাবে এসব দাম বাড়ছে। সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এসব নিয়ন্ত্রণে‌। বর্তমানে না আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কন্ট্রোলে, না আছে বাজারব্যবস্থা তাদের কন্ট্রোলে, না আছে দেশের অর্থনীতি তাদের কন্ট্রোলে। আজকে যদি চীন বলে তোমাদের টাকা দেব না, উন্নয়ন কাজ থেমে যাবে। কারণ সরকারের সেই কৌশল নেই যে কারো সাথে সম্পর্ক অবনতি হলে কিভাবে সেটি মেকআপ করতে হয়। যে কারণে ভারত কোন কিছু রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই সঙ্গে সঙ্গে ১০০ টাকা দাম উঠে যায়। বর্তমানে সরকারের না আসে পররাষ্ট্রনীতি না আছে অর্থনীতি। আছে শুধু ক্ষমতায় থাকার নীতি।
সরকার পতনের উদ্দেশ্যে নূর বলেন, বর্তমানে সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য কত মানুষের লাশ পড়ুক, যতই মানুষের রক্তের বন্যা ভেসে যাক তবু তারা ক্ষমতা ছাড়বে না। কিন্তু আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই আমি চ্যালেঞ্জ করলাম আপনারা কালকে নামেন পরের দিন দেখবেন পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে। এরশাদের পতনের আগের দিনও জেনারেল নুরুদ্দিন রা বৈঠক করেছিলেন। কিন্তু যখন জনগণ নেমে গেছে তখন তারা বলেছে আমরা আর আপনাদের সাথে নাই। তাই বর্তমানে জনগণের ঐক্যবদ্ধ গণ আন্দোলনের বিকল্প নাই। আশা করছি খুব শীঘ্রই সে গণআন্দোলনের ডাক পাবেন।
নূর বলেন, যেভাবে আমাকে টার্গেট করে একের পর এক মামলা দেয়া হচ্ছে। ছাত্রলীগ যুবলীগ দিয়ে হামলা করছে। কিন্তু আমি তো থেমে যায়নি। যেভাবে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে দুই বছর মিথ্যা মামলায় কারাগারে রেখেছে। সেখানে আমি নুর কিছুই না। আমারতো খালেদা জিয়ার মতো লাখ লাখ নেতাকর্মী নেই। কিন্তু আমি জানি আমার পরিনিতি টাও বেগম জিয়ার মত হতে পারে। আওয়ামী লীগের নেতা মাকসুদ কামাল তো টকশোতে বলেছেন যে ভিপি নুরের পরিণতিও খালেদা জিয়ার মত হবে। কিন্তু আমি বলছি আমার একটা জীবনের বিনিময়ে যদি এদেশের ১৮ কোটি মানুষ মুক্তি পায় তাহলে আমার জীবন আমি উৎসর্গ করলাম। কোন গণআন্দোলন ত্যাগ ছাড়া সফল হয়নি।তাই জনগণের প্রতি অনুরোধ থাকবে এখন আর বসে থাকার সময় নেই খুব শীঘ্রই ডাক আসবে গণআন্দোলনের।
মধ্যবর্তী নির্বাচন প্রসঙ্গে সাবেক ভিপি নূর বলেন, আপনারা (সরকার) দেখেছেন সারা দেশ গর্জে উঠেছে। আপনারা চাইলেও জোর করে আর ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। কিন্তু যদি নিরাপদে ফিরতে চান তাহলে নিজেরাই একটা মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হয় তবে তাই করুন। যদি নিরাপদে ফিরতে চান। আর যদি এরশাদের মতো কিংবা পৃথিবীর যে সকল স্বৈরশাসকের করুণ পরিণতি হয়েছে সেটা যদি চান তাহলে জনগণের গণআন্দোলনের জন্য অপেক্ষা করুন।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য নঈম জাহাঙ্গীর এর সভাপতিত্বে
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধের প্রজন্ম আহ্বায়ক কালাম ফয়েজী,
মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক কাউন্সিলর মোঃ ফরিদ উদ্দিন প্রমূখ।

ফেসবুকে লাইক দিন

Latest Tweets

তারিখ অনুযায়ী খবর

March 2024
F S S M T W T
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031