ব্রেকিং নিউজঃ

গলায় মাছের কাঁটা বিঁধলে কি করবেন?

শিরোনাম শুনে লেখাটি যেমন ভাবছেন, লেখাটি মোটেই সেরকম নয়। গলার কাঁটার সাহিত্যিক অর্থ আপদ বা বিপদ।

আমি সহজ অর্থ ও তার বৈজ্ঞানিক সমাধান নিয়েই দুকলম লিখতে বসলাম। ।

একটু আগে এ সমস্যা নিয়ে এক বন্ধু ফোন দিলেন। ভাবলাম এ নিয়ে লেখা যায়। প্রসংগ গলায় মাছের কাঁটা নিয়ে।

জীবনে একবার গলায় মাছের কাঁটা লাগেনি এরকম কাউকে পাওয়া দুষ্কর। কাঁটা বিঁধলে দৈহিক যে পরিমাণ পীড়া লাগে, তার চেয়ে বেশি পীড়ন হয় মানসিক।

কাঁটা সাধারণত চেষ্টা তদবিরে চলে যায় ঘন্টা দেড় দুয়েকের মধ্যে কিন্তু তার রেশ রেখে যায় দু’তিনদিন।

কাশি আর গলা ব্যথা চলতে থাকে অনবরত। মনে হয় কাঁটা বোধ হয় যায়নি।

আসলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কাটা চলে যায় কিন্তু যাওয়ার আগে একটু আঁচড় দিয়ে যায়।

আর ঐ আঁচড়ের জায়গায় ব্যথা করতে থাকে দু’তিন দিন, তাতেই এমন লাগে।তবে সব ক্ষেত্রে এমন সহজে বিষয়টার সমাধান হয়ে যায় না।

কথা কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা মারাত্মক বিপত্তিতে ফেলে দেয়। একবার এক টারমিনাল স্টেজ এর গর্ভবতী মায়ের গলায় একটি কবুতরের হাড় যা অনেকটা কাটার মতো, বিঁধে যায়।

বাহির থেকে বুঝা নাগেলেও এক্সরেতে (শিল্ড গার্ড ব্যবহার করে) তা ধরা পড়ে।

লেবার ওয়ার্ড, অপারেশন থিয়েটার, গাইনি সার্জন সব রেডি রেখে আমি ও এন্ডোস্কোপিস্ট মিলে সেই কয়েক মুহূর্তেই মধ্যে কাটাটা বের করে আনতে সক্ষম হই।

আরেকবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন এক রাজনৈতিক নেতা।

ইতিপূর্বে এই নেতাজী যখন তখন নিজের ক্ষমতা জাহির করতে হাসপাতালে এসে গায়েপড়ে ঝগড়াঝাটি করতেন।

এতে আমরা বেশ বিরক্ত ছিলাম তার উপরে। কিন্তু সেদিন তার মুখে আর রা’ নেই।

আমাদের ইউ এইচ এফ পি ও স্যার, অত্যন্ত প্রবীণ। স্যার খুব দক্ষতার সাথে ‘প্রায় সোয়া এক ইঞ্চি’ লম্বা একটা বোয়াল মাছের কাঁটা আল জিহবার পিছনের দেয়াল থেকে বের করে আনেন।

সেই থেকে ঐ নেতা আমাদের হাসপাতালের বন্ধু হয়ে যান। তারপর থেকে সুখে দুখে তিনিই সবার আগে ঝাপিয়ে পড়তেন। তা গলায় কাঁটা মাছের বা চিকন হাড়ের কাঁটা বিঁধলে কি করতে হয়?

গলায় কাঁটা বিঁধলে তার প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে সহজ কিছু সমাধান আমাদের পরিবার বা সমাজে প্রচলিত, যার সবগুলোই প্রায় সায়ন্টিফিক। আসুন জেনে নেই সে সম্পর্কে।

১. শক্ত ভাতের নলা: ভাত কে হাতের মুঠে চেপে চেপে টেনিস বলের মতো বানিয়ে তা না চিবিয়ে, ধীরে ধীরে গিলে ফেলার চেষ্টা করতে হিয়।

এতে আঠালো ভাত আটকে থাকা মাছের কাটাকে নিয়ে নীচে নেমে যায়। এ পদ্ধতি দু’তিনবার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

২.পাঁকা কলা : পাঁকা কলা এক ইঞ্চি বা দেড় ইঞ্চি করে মুখে পুরে না চিবিয়ে গেলার চেষ্টা করা করা।

এতে মাছের কাটা কলার অংশের সাথে আটকে যায়, এবং কলার সাথে সাথে নীচে নেমে পড়ে।

৩. ভিনেগার পান: ভিনেগার এসিডিক। তাই এক চামচ ভিনেগার এক কাপ পানির সাথে মিশিয়ে কুলি করলে বা পান করতে থাকলে তা কাটাকে দূর্বল করে ফেলে।

অথবা সরাসরি এক চামচ ভিনেগার গিলে ফেললে তা অনেক সময় কাটাকে গলিয়ে দূর্বল করে ফেলে।

৪. পানি পান: ক্রমাগত কিছুটা শক্তি প্রয়োগে পানি গিললে তা অনেক সময় কাটাকে ফ্ল্যাশ করে নিচে নেমে নিয়ে যায়।

৫. কফ রিফ্লেক্স: জোরে জোরে ক্রমাগত দু চারটা কাশি দিলে অনেক সময় গলার পিছনের দেয়ালে আটকে থাকা মাছের কাটা, কাশির ঝাপ্টায় ছুটে গিয়ে সামনে চলে আসে এবং বেরিয়ে যায়।এ হলো কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা।

যদি আটকে থাকা কাঁটা খালি চোখে পরিষ্কার ভাবে দেখা যায় তবে তা সরানোর জন্যে একজন এম বি বি এস ডাক্তারের বা নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হবেন।

নিজে নিজেই আনতে গেলে বিপত্তি বেড়ে যেতে পারে।

চিকিৎসক খুব সহজেই সেটা তার কাছে থাকা স্পেশাল ‘ফরেন বডি রিমোভার’ দিয়ে নিয়ে আসবেন।প্রতিকার এর চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম।

খাবার সময় মাছের কাটা ধৈর্য নিয়ে বেছে বেছে খেতে হয়। বাচ্চাদের এবং বয়স্কদের খাবারের সময় মাছের কাটা বেছে দিতে হয়।

খাবারের সময় গল্পগুজব, ঠাট্টা তামাসা, হৈ-হুল্লোড় করা মোটেই ঠিক নয়।

অথবা সিরিয়াস কোন বিষয় নিয়ে কথা বলতে হয় না।

খাওয়ার মধ্যে অন্তত তিনবার পানি খেতে হয়। লেখক: ডা. মো. সাঈদ এনাম, (সাইকিয়াট্রিস্ট), ডি এম সি কে-৫২
মেম্বার, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন এবং আমেরিকান একাডেমি অব নিউরোলজি।

ফেসবুকে লাইক দিন

Latest Tweets

তারিখ অনুযায়ী খবর

May 2024
F S S M T W T
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31